সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

কাকে, কেন ‘আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক’ বলা হয়?

কাকে, কেন ‘আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক’ বলা হয়? কাকে, কেন ‘আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক’ বলা হয়? Who,why is called the 'Father of Modern Astronomy? নিকোলাস কোপার্নিকাস ছিলেন একজন ভুবন-বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী। ১৪৭৩ খ্রিস্টাব্দে পোল্যান্ডের তোরুন শহরে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানী ছিলেন ইউরোপীয় নবজাগরণের একজন ধারক, বাহক ও পৃষ্ঠপোষক। সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তত্ত্বের তিনিই ছিলেন প্রথম আধুনিক প্রবক্তা । গভীর পর্যবেক্ষণ এবং গাণিতিক হিসাব নিকাশের মাধ্যমে তিনি টলেমির পৃথিবীকেন্দ্রিক তত্ত্বকে খারিজ করে এই নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। এই তত্ত্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মত হল : মহাবিশ্বের কেন্দ্র বলে কিছু নেই , পৃথিবীর কেন্দ্র মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়।  প্রতিটি গ্রহ ও উপগ্রহের মধ্যবিন্দু হল সূর্য । সূর্যকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ও তার অন্যান্য উপগ্রহগুলি তাদের নির্দিষ্ট কক্ষপথে উপবৃত্তাকারে প্রদক্ষিণ করে।  পৃথিবী নিজে গতিশীল বলেই দূরের গ্রহগুলিকে চলমান মনে হয়। পৃথিবী প্রদক্ষিণরত বলেই মানুষের দৃষ্টিতে সূর্যের অবস্থান পাল্টে যায়। ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর  ‘ On the Revolut...

কাকে, কেন ‘আধুনিক পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃৎ’ বলা হয়?

কাকে, কেন ‘আধুনিক পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃৎ’ বলা হয়? কাকে, কেন ‘আধুনিক পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃৎ’ বলা হয়? Who, why is called the ‘Pioneer of Modern Experimental Science’ ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর ইতালিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় ইউরোপীয় নবজাগরণ । এই নবজাগনের যুগে সূচনার অব্যবহিত পূর্বেই কিছু মানুষের মধ্যে জন্ম নেয় জগৎ ও জীবন সম্পর্কে নতুন নতুন চেতনা। এই নতুন চেতনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল যুক্তিবাদ , মানবতাবাদ ও বিজ্ঞানমনস্কতা । বিজ্ঞানমনস্কতা বলতে বোঝায় এমন এক চেতনাকে, যা মানুষকে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে সত্য উপলব্ধিতে অনুপ্রাণিত করে। একজন খ্রিস্টীয় সন্ন্যাসী হওয়া সত্বেও রজার বেকনের মধ্যে ছিল এই বিজ্ঞানমনস্কতার উজ্জল উপস্থিতি। বিজ্ঞানমনস্কতার কারণেই তিনি মনে করতেন, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কোন তত্ত্বকে বিনা পরীক্ষায় গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ, কেবলমাত্র হাতে-কলমে পরীক্ষার দ্বারাই বিজ্ঞানের সত্য আবিষ্কার করা সম্ভব। এই কারণে তিনি নিজেও বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব প্রকাশের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপরে জোর দিতেন। তাঁর এই ভাবনার প্রভাবে আধুনিক বিজ্ঞানচ...

'বৈজ্ঞানিক বিপ্লব' বলতে কী বোঝো?

'বৈজ্ঞানিক বিপ্লব' বলতে কী বোঝো? 'বৈজ্ঞানিক বিপ্লব' বলতে কী বোঝো? What do you mean by ‘Scientific Revolution’? ‘ বিপ্লব ’ শব্দের অর্থ হল ‘ আমল পরিবর্তন ’। সুতরাং, সহজ কথায়, ‘বৈজ্ঞানিক বিপ্লব’ হল বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নয়ন বা অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন। তবে, এই পরিবর্তন ছিল (বৈজ্ঞানিক বিপ্লব) একটি ধারাবাহিক ঘটনা, যার সূচনাকাল ধরা হয় ১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে কোপার্নিকাসের ‘ On the Revolutions of the Celestial Spheres ’ নামক গ্রন্থ প্রকাশের সময়কে। মূলত এই সময় থেকেই আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার জয়যাত্রার শুরু ধরা হয়। মানব সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসে আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভব ও তার প্রসার এক উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ১৪৫৩ সালের কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর ইতালিকে কেন্দ্র করে ইউরোপে যে নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল, তার ফলে আধুনিক বিজ্ঞানের উদ্ভব ঘটে। এরপর ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকব্যাপি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ব্যাপক ও অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটে। এই উন্নতির প্রভাবে কৃষি, শিল্প, সামরিক, মুদ্রণ, চিকিৎসা, মহাকাশ ও সমুদ্র বিজ্ঞানসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নতুন নতুন...

বিজ্ঞান কী?

বিজ্ঞান কী? বিজ্ঞান কী? বিজ্ঞান বলতে কী বোঝো? ‘ বিজ্ঞান ’ কথাটি এসেছে ইংরেজি ‘Science’ শব্দ থেকে। আর ‘Science’ কথাটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ Scientia ’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘বিশেষ জ্ঞান’ । এই বিশেষ জ্ঞান বা বিজ্ঞান হল প্রকৃতি ও সমাজ সম্পর্কিত সেই জ্ঞান বা সাধনা, যা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ও সামাজিক ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে এবং প্রকৃত-সত্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানের আবির্ভাব : পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের পর থেকেই বিজ্ঞানচর্চা শুরু হয়েছে। মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সাথে সাথে এই চর্চা আধুনিক বিজ্ঞান সাধনায় রূপ নিয়েছে। এই আধুনিক বিজ্ঞান হল, প্রাকৃতিক ও সামাজিক ঘটনাবলী ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক (কার্যকারণ সম্পর্ক) সম্বন্ধে শৃঙ্খলাবদ্ধ জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি। বিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ ধারণা : বর্তমানে আমরা সাধারণভাবে বিজ্ঞান বলতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও তার বিভিন্ন শাখা যেমন পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূবিদ্যা, জীববিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, পূর্তবিদ্যা, কৃষিবিদ্যা, মনোবিদ্যা ইত্যাদিকে বুঝি। কিন্তু প্রকৃত অর্থে, জগ...

গৌরবময় বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল

 গৌরবময় বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল গৌরবময় বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল গৌরবময় বিপ্লব : ১৬৮৮-১৬৮৯ সালে সংঘটিত ইংল্যান্ডের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল গৌরবময় বিপ্লব। এই বিপ্লবের ফলে  রাজা দ্বিতীয় জেমস -এর পতন ঘটে এবং তাঁর জামাতা, হল্যান্ডের রাজা  তৃতীয় উইলিয়াম  (উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ) এবং তাঁর স্ত্রী  মেরি  যৌথভাবে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেন। পটভূমি বা কারণ: ১) সম্রাটের অজনপ্রিয়তা : ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় জেমস ছিলেন একজন ক্যাথলিক সম্রাট, ইংল্যান্ডে প্রভাবশালী ধর্ম হিসাবে ক্যাথলিক ধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টার কারণে তিনি ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারান। সরকার ও সেনাবাহিনীর উচ্চপদে ক্যাথলিকদের নিয়োগ দিয়ে তিনি আইন লঙ্ঘন করেন।  ২) সম্রাটের উচ্ছেদ : ‘ উইলিয়াম অফ অরেঞ্জে ’র নেতৃত্বে বিশিষ্ট ইংরেজ ও ডাচ (হল্যান্ডের) নেতাদের একটি দল উইলিয়ামকে (দ্বিতীয় জেমসের জামাতা এবং ডাচ স্ট্যাডহোল্ডার) ইংল্যান্ড আক্রমণ করার আমন্ত্রণ জানান। শেষ পর্যন্ত সম্রাট দ্বিতীয় জেমস ব্যাপক বিরোধিতার সম্মুখীন হয়ে ফ্রান্সে পালিয়ে যান। গৌরবময় বিপ্লবের ফলাফল: উইলিয়াম এবং তার স্ত্...

গৌরবময় বিপ্লব কাকে বলে?

গৌরবময় বিপ্লব কাকে বলে? গৌরবময় বিপ্লব কাকে বলে? গৌরবময় বিপ্লব : ‘গৌরবময় বিপ্লব’ হল ১৬৮৮-১৬৮৯ সালের মধ্যে সংঘটিত ইংল্যান্ডের কিছু ধারাবাহিক ঘটনা, যার ফলে রাজা দ্বিতীয় জেমস -এর পতন ঘটে এবং তাঁর জামাতা, হল্যান্ডের রাজা তৃতীয় উইলিয়াম (উইলিয়াম অফ অরেঞ্জ) এবং তাঁর স্ত্রী মেরি  যৌথভাবে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে বসেন। গৌরবময় বিপ্লবের পটভূমি বা কারণ : রাজা দ্বিতীয় জেমস ছিলেন গোঁড়া ক্যাথলিক। তাঁর কঠোর রাজনৈতিক শাসন এবং ক্যাথলিক প্রভাবিত ধর্মীয় নীতি প্রোটেস্ট্যান্ট জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এই পরিস্থিতিতে, ১৬৮৮ সালে, জেমসের একটি পুত্র সন্তান জন্মালে প্রোটেস্ট্যান্টরা এই ভেবে উদ্বিগ্ন হন যে, দেশে আবার নতুন করে ক্যাথলিক সম্রাটের কঠোর শাসন শুরু হবে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী নেতারা প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মাবলম্বী হল্যান্ডের রাজা  উইলিয়াম অফ অরেঞ্জকে  ইংল্যান্ড আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সম্রাট  দ্বিতীয় জেমস ফ্রান্সে পালিয়ে যান। এভাবে উইলিয়াম ও মেরি বিনা বাধায় ১৬৮৯ সালের এপ্রিল মাসে ইংল্যান্ডের সিংহাসনের দখল নেন। বিনা রক্তপাতে ঘটে যাওয়া এই অভূত...

সুফিবাদ কী? সুফিবাদের মূল কথা কী?

সুফিবাদ কী? সুফিবাদের মূল কথা কী? সুফিবাদ কী? সুফিবাদের মূল কথা কী? সুখীবাদ কী : ‘সুফি’ শব্দটি আরবি শব্দ ‘সফা’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘ পবিত্রতা ’। এই অর্থে যিনি কায়মনোবাক্যে পবিত্র তিনিই সুফি। ‘সুফি’ শব্দের অন্য একটি অর্থ হল  ‘অকপটতা’ । এদিক থেকে বিচার করলে, যিনি কোন কপটতা বা মিথ্যার আশ্রয় নেন না, তিনিই সুফি। সুফিরা মূলত, হযরত মুহাম্মদ-এর মত সংযমী জীবনযাপন করাকে ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের অন্যতম প্রধান উপায় বলে মনে করেন। এবং ইসলাম ও মানবতার সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করাকে মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে কাব্য, সঙ্গীত, নৃত্য ইত্যাদি মাধ্যমকে ঈশ্বর লাভের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন।  সুতরাং, সুফিবাদ হল ভারতের তুর্কু-আফগান যুগে প্রচারিত ( ভক্তিবাদের মতো ) ইসলাম ধর্মের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সংস্কারকামী ও মানবতাবাদী ভাবধারা, যা ঐশ্বরিক প্রেম ও জ্ঞান সন্ধানের মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে সরাসরি নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। আব্বারি-র মতে,  সুফিবাদ বলতে ধর্মপ্রাণ মুসলিমের ব্যক্তিগত অনুভূতির মাধ্যমে আল্লাহর জীবন্ত সান্নিধ্যদের উপলব্ধি বোঝায়। সুখীবাদের মূল কথা : মানবসেবা বা মানুষের প্রতি ভ...

ভক্তিবাদ কী? ভক্তিবাদের মূলকথা কী?

ভক্তিবাদ কী? ভক্তিবাদের মূলকথা কী? ভক্তিবাদ কী? ভক্তিবাদের মূলকথা কী? What is Bhaktiism? What is the essence of Bhaktiism? ভক্তিবাদ কী? ‘ভক্তিবাদ’ কথাটি এসেছে ‘ভক্তি’ শব্দ থেকে। আর ‘ভক্তি’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘ভজ্’ ধাতু থেকে, যার অর্থ ‘ভজনা’ বা ‘নামগান’। আসলে, ভক্তি হল ভক্তের হৃদয়জাত এক সূক্ষ্ম ধর্মীয় অনুভূতি বা ভাবাবেগ, যেখান থেকে ঈশ্বরের প্রতি নিঃস্বার্থ আত্মসমর্পণ ও ঐকান্তিক ঈশ্বরপ্রেম জন্ম নেয়, এবং ভজনা বা নামগানের মাধ্যমে তা ঈশ্বরের কাছে পৌঁছায়। ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতকে (মধ্যযুগে) ভারতে একশ্রেণির মানবতাবাদী সাধকের জন্ম হয়, যারা হিন্দুধর্মের গোড়ামী, রক্ষণশীলতা, অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদের বিরুদ্ধে এবং মানুষের ইহলৌকিক মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে, ভারতীয় সমাজজীবনে মানবপ্রেম ও ভক্তি বা ভজনার মাধ্যমে ঈশ্বর লাভের বিধান দিয়ে যে ধর্মীয় আলোড়ন তুলেছিলেন তাকে ‘ভক্তি আন্দোলন’ বলা হয়। আর এই আন্দোলনকারীদের অনুসৃত পথ ও মতই হল ‘ ভক্তিবাদ’ । ভক্তি বাদের মূলকথা : ভক্তিবাদের মূলকথা (স্বরূপ) হল : ঈশ্বর এক ও অভিন্ন, সকল জীবের মধ্যেই ব্রহ্ম বা পরমাত্মা বিরাজ করে,  ভক্তিই মুক্তির একমাত্র পথ। তা...

মানবতাবাদ বলতে কী বোঝায়?

‘মানবতাবাদ’ বলতে কী বোঝায়? মানবতাবাদ বলতে কী বোঝায়? ‘হিউম্যানিজম’ বা ‘মানবতাবাদ’ কথাটি এসেছে ‘Humanitas’ নামক একটি ল্যাটিন শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘ মানব প্রকৃতি, সভ্যতা এবং দয়া ’। আবার এই ল্যাটিন শব্দটি এসেছে ‘Hūmanus’ থেকে, যার অর্থ ‘মানুষ’। অর্থাৎ ‘মানবতাবাদ’ কথাটির মধ্যে রয়েছে মানবপ্রেম বা মানুষের কল্যাণের আকাঙ্ক্ষা। পঞ্চদশ শতকে ইউরোপীয় নবজাগরণের প্রভাবে একদল মানুষ ধর্ম, ও ধর্মীয় বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি কান্না প্রভৃতি বিষয়কে মূলধন করে তাঁরা তাঁদের সৃষ্টি-কর্মে মেতে ওঠেন। আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে জন্মদেন নতুন নতুন মানবহিতৈষী দর্শনের। মানবকল্যাণকে কেন্দ্রে রেখে গড়ে ওঠা এই দর্শন ‘ মানবতাবাদ ’ নামে পরিচিত। সুতরাং নবজাগরণের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এই মানবতাবাদ, যা আধুনিক যুগের অন্যতম প্রধান ভিত্তি বা শর্ত। আর মানবতাবাদের মূল কথা (বৈশিষ্ট্য) হল : পার্থিব জগতের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন মানুষ। তাই মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও গুণাবলী বিকাশের উপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়।  মানুষকে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ মর্যাদা , যা তার প্রা...

নবজাগরণের নেতিবাচক প্রভাব কী ছিল?

নবজাগরণের নেতিবাচক প্রভাব কী ছিল? নবজাগরণের নেতিবাচক প্রভাব কী ছিল? রেনেসাঁস বা নবজাগরণের ইতিবাচক ফলাফলের সাথে কিছু নেতিবাচক প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই তা অর্থ-সামাজিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করেছে। সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি হয় : নবজাগরণের প্রভাবে ইউরোপীয় সমাজে অভিজাত শ্রেণীর প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেলেও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের জন্য সার্বিক সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ে : নবজাগরণের প্রভাবে শিল্প বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটলে সহরাঞ্চলের সম্পদের কেন্দ্রীভবন  ঘটে। ফলে গ্রামীণ কৃষকদের আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটে। নৈতিক অবক্ষয় শুরু হয় : নবজাগরণের সূত্র ধরে ধর্ম সংস্কার আন্দোলন মানুষের মধ্যে ধর্মের প্রতি অনাস্থা তৈরি করে।  ফলে মানুষ ধর্মীয় নৈতিকতা থেকে দূরে সরে যায় এবং সমাজে নৈতিক অবক্ষয় শুরু হয়। ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে সংঘাত বাধে : নবজাগরণের প্রভাবে মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনার প্রসার ঘটলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি তার বিরোধিতা করে। উভয়ের মধ্যে সংঘাত তৈরি হয় এবং বিজ্ঞান গবেষণা বাধাপ্রাপ্ত হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘর্ষ : নবজাগরণকে কে...

অগসবার্গের সন্ধির শর্তগুলো কী ছিল?

অগসবার্গের সন্ধির শর্তগুলো কী ছিল? অগসবার্গের সন্ধির শর্তগুলো কী ছিল? অগসবার্গের সন্ধি : ধর্মসংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইউরোপ মূলত দুটি ধর্ম সম্প্রদায় বিভক্ত হয়ে যায়। একদিকে রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়, অন্যদিকে ছিল প্রটেস্টান্টরা। ১৫৩০ সালেক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী পঞ্চম চার্লস প্রটেস্টেন্ডের ক্যাথলিক চার্চ-এর কাছে আত্মসমর্পণ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে ক্যাথলিক সম্রাট পঞ্চম চার্লসের বিরুদ্ধে প্রোটেস্টানরা রাজারা যুদ্ধ ঘোষণা করে। শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে সম্রাট পঞ্চম চাল পরাজিত হন। এই প্রেক্ষাপটে ১৫৫৫ সালে প্রোটেস্ট্যান্ট রাজাদের সঙ্গে তিনি সন্ধি করতে বাধ্য হন। এই সন্ধি অগসবার্গের সন্ধি নামে পরিচিত। অগসবার্গের সন্ধির শর্ত : এই সন্ধির দ্বারা : প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ আইনগত বৈধতা লাভ করে,  রাজার ধর্ম প্রচার ধর্ম বলে স্বীকৃত হয়,  বলা হয়, প্রচেস্ট অ্যান্ড চার্চের বিষয় ও অ্যাওয়ার্ড এবং প্রটেস্ট্যান্ট প্রজাদের উপর কোন অত্যাচার করা হবে না। যেসব প্রজা রাজার ধর্ম ধর্মকে নিজের ধর্ম বলে মেনে নেবে না তাদের দেশ ত্যাগ করার সুযোগ দিতে হবে। যেকোনো ধর্মীয় বিরোধ আলাপ আলোচনার মাধ...

ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলাফল

ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলাফল কী হয়েছিল? ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলাফল ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব ধর্মসংস্কার আন্দোলন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এক ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই আন্দোলনের ফলাফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী।  ইউরোপের ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের গভীর প্রভাব পড়েছিল। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ধর্মীয় প্রভাব : খ্রিস্টান জগতের বিভাজন :   ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে খ্রিস্টান ধর্মের ঐক্য বিনষ্ট হয় এবং প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক নামে দুটি পৃথক ধর্ম সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়। পোপের প্রাধান্য নষ্ট হয় : এই আন্দোলনের ফলে ইউরোপ তথা বিশ্বে ক্যাথলিক চার্চ ও পোপতন্ত্রের একক প্রাধান্য নষ্ট হয়। ফলে, বিশ্বজনীন চার্চ-ব্যবস্থার পতন ঘটে। প্রতি-ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূচনা : ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে প্রটেস্ট্যান্ট ধর্মমতের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে রুখে দিয়ে ক্যাথলিক ধর্মের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি-সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টি হয় : ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে ইউরোপে লুথারবাদ, কেলভিনবাদ, অ্যানাব্যাপটিস্টব...

ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ওয়াইক্লিফের অবদান

ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ওয়াইক্লিফের অবদান কী ছিল? ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ওয়াইক্লিফের অবদান অধ্যাপক জন ওয়াইক্লিফ ছিলেন ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনিই প্রথম ক্যাথলিক চার্চ ও পোপতন্ত্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। আর এ কারণে তিনি ‘ ধর্মসংস্কার আন্দোলনের শুকতারা’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। ইংল্যান্ড তথা ইউরোপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।  যাজকের বিরোধিতা : জন ওয়াইক্লিফ বলেন, প্রতিটি মানুষই ঈশ্বরের কাছে সমান। তাই ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক আছে। এবং সে কারণেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার জন্য যাজকের কোন প্রয়োজন নেই। মানুষ নিজে নিজেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারে।  বাইবেলের অনুবাদ : তিনি নিজে একজন ধর্মযাজক হয়েও পোপ ও যাজকদের দুর্নীতি , অর্থলোলুপতা , আড়ম্বরপ্রিয়তা এবং নৈতিক অধঃপতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে তিনি ইংরেজি ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করে তা জনসাধারণের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করেছিলেন। ফলে সাধারণ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মের মূল নীতি সম্পর্কে জানত...

ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি

ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা করো। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে ইউরোপে প্রচলিত পোপতন্ত্র এবং রোমান ক্যাথলিক চার্চের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, দুর্নীতি, অনাচার ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এক তীব্র সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। খ্রিষ্টান ক্যাথলিক চার্চ-বিরোধী এই আন্দোলন ‘ ধর্মসংস্কার আন্দোলন ’ নামে পরিচিত। কোন কোন ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে ‘ ধর্মবিপ্লব’ বলেও অভিহিত করেছেন। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি : কোন একটি নির্দিষ্ট কারণে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়নি। এর পিছনে ছিল বিভিন্ন রকমের আর্থ-সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কারণ। ১) নবজাগরণের প্রভাব : খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের  ইউরোপে, বিশেষ করে ইতালিকে কেন্দ্র করে, ইউরোপীয় চিন্তা-জগতে ‘ নবজাগরণ ’ ঘটে। ফলে মানুষ যুক্তিবাদী হয়ে ওঠে। এই যুক্তিবাদী মানুষের মধ্যে স্বাধীনচিন্তা, সমালোচনামূলক মনোভাব, ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি গড়ে ওঠায় তারা গির্জার দুর্নীতি , অনাচার ও স্বৈরাচারী মনোভাব- এর   বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়।  ২) স্কুলমেন দর্শনের প্রভাব : ইউরোপে একাদশ দ্বাদশ শতকে খ্রিস্টানধর্মকে যুক্তি-তর...

ইউরোপীয় ধর্মসংস্কার আন্দোলন কী?

 ধর্মসংস্কার আন্দোলন কী? ইউরোপীয় ধর্মসংস্কার আন্দোলন কী? খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যীশুখ্রীষ্টের হাত ধরেই রোমান ক্যাথোলিক চার্চের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এই চার্চের প্রধান হলেন পোপ। এবং তিনিই খ্রিস্টান ধর্মের প্রধান ধর্মগুরু। পোপকে কেন্দ্র করে পরিচালিত ক্যাথলিক চার্চ এবং তার ব্যবস্থাপানাকে এক কথায় বলা হয় পোপতন্ত্র । মধ্যযুগের শেষ দিকে, খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে, পোপতন্ত্র অত্যন্ত দুর্নীতি , অনাচার ও কুসংস্কারে ভরে ওঠে। চার্চের যাজকেরা স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর বিভিন্নভাবে শোষণ ও নির্যাতন চালাতে থাকে। যে সংস্থা সাধারণ মানুষের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের উদ্দেশ্যে তার কার্যকলাপ পরিচালনা করতো, তা ক্রমে হয়ে ওঠে অমঙ্গলের প্রতীক।  এমত অবস্থায়, ১৫ শতকে নবজাগরণের প্রভাবে ইউরোপের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে পরিবর্তনের সাথে সাথে ধর্মীয় জীবনেও এক বিরাট পরিবর্তন আসে। এই সময়ে মানুষের মধ্যে যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনার প্রসার ঘটলে তাদের চিন্তাজগতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর ফলে সাধারণ মানুষ ক্রমে চার্চ ও যাজকদের দুর্নীতি সম্পর্কে অবহিত হয়ে ওঠে। এবং এ কারণে তারা চার্চের সংস্কার ও সংশ...

নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব কী ছিল?

নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব কী ছিল? নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব কী ছিল? পঞ্চদশ শতকের ইতালির নবজাগরণ সমকালীন ইউরোপীয় সাহিত্য, শিল্পকলা, ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শন ও সমাজ-সংস্কৃতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল। এই পরিবর্তন দু'ভাবে পরিলক্ষিত হয় - ইতিবাচক এবং নেতিবাচক । নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব : নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাবগুলো হল : ইতিহাসচর্চায় প্রভাব : নবজাগরণের প্রভাবে ইতিহাস চর্চায় ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উদ্ভব হয়। এই নতুন ইতিহাস দর্শনের প্রবক্তা ছিলেন লিওনার্দো ব্রোনি, ফ্রানচেথকো গুইচিয়ারদিনি ও ফ্ল্যাবিও বিয়োন্দ। সাহিত্যচর্চায় প্রভাব : এতদিন ইউরোপে শুধুমাত্র গ্রিক, রোমান ও ল্যাটিন ভাষার চর্চা হত। কিন্তু নবজাগরণের কল্যাণে মাতৃভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। সাহিত্যের বিষয় হিসেবে ঈশ্বর বন্দনার জায়গায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়া বিষয় হিসাবে গুরুত্ব পায়। দান্তে আলীগিরি, ফ্রান্সিস্কো পেত্রার্ক, জিওভান্নি বোকাচ্চিও, জিওফ্রে চসার, এডমান্ড স্পেন্সার, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার প্রমুখ সাহিত্যিক এই পর্বে মাতৃভাষায় সাহিত্যচর্চা করে খ্যাতি লাভ করেন। শিল্পকলায় প্রভাব...

ইউরোপীয় নবজাগরণ বলতে কী বোঝো?

ইউরোপীয় নবজাগরণ বলতে কী বোঝো? নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য লেখো। ইউরোপীয় নবজাগরণ বলতে কী বোঝো? ‘ রেনেসাঁ ’ শব্দের অর্থ হলো ‘ নবজাগরণ ’। পঞ্চদশ শতকের ইউরোপে গ্রিক ও ল্যাতিন ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাবে সেখানকার সাহিত্য, ললিতকলা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শন সহ নানান ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। ইউরোপীয় ভাবজগতে জন্ম হয় এক নতুন চেতনার। এই নতুন চেতনার আলোকে ইউরোপের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে, তা এক কথায় ‘ রেনেসাঁ’ বা ‘ নবজাগরণ ’ নামে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে, এই সময় ইউরোপীয় চিন্তা ও চেতনার জগতে এক উদারনৈতিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তিবাদী ভাবধারার বিকাশ ঘটে। এই নতুন ভাবধারাই ইউরোপের ইতিহাসে রেনেসাঁ বা নবজাগরণ বা নবজাগৃতি নামে খ্যাতি লাভ করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইউরোপীয় নবজাগরণকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন। এই পর্যায়েগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দুটি পর্যায় হল : ১) খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকের নবজাগরণ এবং  ২) খ্রিস্টীয় পঞ্চমদশ শতকের নবজাগরণ। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে, আধুনিক অর্থে নবজাগরণ হল, ইতালীর ফ্লোরেন্স নগরীকে কেন্দ্র করে পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি য...

ক্রুসেডে খ্রিষ্টানদের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল?

ক্রুসেডে খ্রিষ্টানদের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল? ক্রুসেডে খ্রিষ্টানদের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল? প্রায় দুশো বছর ধরে আটটি ক্রুসেডে অংশ নিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হওয়ার পরও জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করা খ্রিস্টানদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাদের এই ব্যর্থতার পিছনে ছিল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ।  ক্রুসেড ব্যর্থ হওয়ার কারণ : বাস্তব চিন্তাভাবনার অভাব : ক্রুসেডকে সফল করার জন্য যে বাস্তব চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল তা ক্রুসেডারদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে, সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন দখল করেও তার নিয়ন্ত্রণ তারা ধরে রাখতে পারেনি।  দুর্বল সংগঠন : ক্রুসেড বাহিনী সাংগঠনিকভাবে দুর্বল ছিল। ধর্ম যোদ্ধাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল কৃষক ও সাধারণ মানুষ। তাদের না-ছিল সামরিক শিক্ষা, না-ছিল আধুনিক হাতিয়ার।   বোঝাপড়ার অভাব : ক্রুসেডে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব ছিল। এমনকি শেষের দিকে ক্রুসেড নিয়ে পোপ ও ইউরোপীয় রাজাদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়। শাসকবর্গের অনাগ্রহ : অনেক ইউরোপীয় রাজা তাদের রাজত্ব ছেড়ে দীর্ঘদিন ক্রুসেডে যুক্ত থাকতে চাননি। ক্রুসেডের প্রতি অনীহা : দী...

ক্রুসেডের ফলাফল আলোচনা করো

ক্রুসেড কী? ক্রুসেডের ফলাফল লেখো। ক্রুসেডের ফলাফল আলোচনা করো সংসদ নমুনা প্রশ্ন — ২০২৪ ১০৯৬ থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত, প্রায় দু’শো বছর ধরে, জেরুজালেম পুনরুদ্ধারকে কেন্দ্র করে খ্রিস্টান ও মুসলিম শাসকদের মধ্যে যে তুমুল যুদ্ধ চলেছিল তা  ‘ ক্রুসেড ’  বা ‘ ধর্মযুদ্ধ’  নামে পরিচিত।  মধ্যযুগের ইউরোপের সমাজ , সভ্যতা , রাষ্ট্র , সংস্কৃতি প্রভৃতির উপর ক্রুসেডের প্রভাব বা ফলাফল ছিল সুগভীর এবং সুদূরপ্রসারী।  রাজনৈতিক ফলাফল : সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয় : ক্রুসেডের যোগ দিয়ে সামন্ত প্রভুরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিল। ফলে সামন্ততন্ত্রের আর্থিক ভিত্তি নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া অসংখ্য ভূমিদাস ও বহু সামন্ত প্রভুর মৃত্যু হয়। ফলে সামন্ততন্ত্র ভেঙে পড়ে।  জাতীয় রাষ্ট্রের গঠন : ক্রুসেড সামন্ত প্রভুদের অবক্ষয়ের সাথে সাথে রাজাকে শক্তিশালী করে তুলেছিল। ফলে রাজাদের অধীনে ইউরোপে একটি রাজনৈতিক ঐক্যের বাতাবরণ সৃষ্টি হয় যা জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম করে দেয়। অর্থনৈতিক ফলাফল : শিল্পের বিকাশ : ক্রুসেডের ফলে সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয়ের ফলে মধ্যযুগের সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটে এবং শি...