ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ওয়াইক্লিফের অবদান কী ছিল?
ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ওয়াইক্লিফের অবদান |
অধ্যাপক জন ওয়াইক্লিফ ছিলেন ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনিই প্রথম ক্যাথলিক চার্চ ও পোপতন্ত্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। আর এ কারণে তিনি ‘ধর্মসংস্কার আন্দোলনের শুকতারা’ নামে পরিচিতি লাভ করেন।
ইংল্যান্ড তথা ইউরোপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
- যাজকের বিরোধিতা : জন ওয়াইক্লিফ বলেন, প্রতিটি মানুষই ঈশ্বরের কাছে সমান। তাই ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক আছে। এবং সে কারণেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার জন্য যাজকের কোন প্রয়োজন নেই। মানুষ নিজে নিজেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারে।
- বাইবেলের অনুবাদ : তিনি নিজে একজন ধর্মযাজক হয়েও পোপ ও যাজকদের দুর্নীতি, অর্থলোলুপতা, আড়ম্বরপ্রিয়তা এবং নৈতিক অধঃপতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে তিনি ইংরেজি ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করে তা জনসাধারণের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করেছিলেন। ফলে সাধারণ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মের মূল নীতি সম্পর্কে জানতে পারেন।
- জনমত গঠনের চেষ্টা : ধর্মীয় সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল চার্চের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা। এই কাজের জন্য তিনি ‘দরিদ্র যাজক সংঘ’ নামে একটি সম্প্রদায় গড়ে তুলেছিলেন। এই সম্প্রদায় ‘লোলার্ড’ নামেও পরিচিত।
- সম্পত্তির সমান অধিকার : বাইবেলের উদ্ধৃতি তুলে তিনি প্রচার করেন সম্পত্তির উপর সবার সমান অধিকার আছে। ঈশ্বরের কাছে ধনী-দরিদ্রের কোন প্রভেদ নেই।
- গির্জার উপর রাষ্ট্রের অধিকার : জন ওয়াইক্লিপ-এর মতে, দুর্নীতিগ্রস্ত গির্জার বিষয়সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার রাষ্ট্রের আছে। প্রতিটি দেশের গির্জাকে সে-দেশের সরকারের অধীনে আনতে হবে।
- মার্জনাপত্রের বিরোধিতা : তিনি পোপকে যীশু খ্রীষ্টের প্রতিনিধি বলে স্বীকার করতেন না। এবং এ কারণে তিনি ‘ইনডালজেন্স’ বা ‘মার্জনাপত্র’ বিক্রির বিরোধিতা করেছিলেন। প্রচার করেছিলেন, ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভের জন্য পোপ বা গির্জার মধ্যস্থতা করার প্রয়োজন নেই। সৎ কাজ করলেই ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
এইভাবে পোপ এবং যাজকদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রচার করার মাধ্যমে অধ্যাপক ও ধর্মযাজক জন ওয়াইক্লিফ দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এবং ইংল্যান্ড জুড়ে চার্চের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে, যা পরবর্তীকালে ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের পথ প্রস্তুত হয়। আর এ কারণে ঐতিহাসিকরা তাকে ‘ধর্মসংস্কার আন্দোলনের শুকতারা’ বলে অভিহিত করেছেন।
-----------xx-----------
এই প্রশ্নটিই অন্য যেভাবে আসতে পারে :
- জন ওয়াইক্লিফ কে ছিলেন? ধর্মসংস্কার আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা কীরূপ ছিল?
- কাকে, কেন ‘ধর্মসংস্কার আন্দোলনের শুকতারা’ বলা হয়?
- কে, কখন সর্বপ্রথম ক্যাথলিক চার্চ ও পোপতন্ত্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন? ধর্মসংস্কার আন্দোলনে ব্যাপারে তাঁর অবদান কী ছিল?
- জন ওয়াইক্লিফ কোন্ দেশের লোক ছিলেন? তিনি কেন চার্জ ও পোপের বিরোধিতা করেছিলেন? এর ফলাফল কি হয়েছিল?
- জন ওয়াইক্লিফ এর মূল বক্তব্য কী ছিল? তার এই বক্তব্য কীভাবে ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পথ প্রস্তুত করেছিল?
ধর্মসংস্কার বিষয়ে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন :
- ধর্মসংস্কার আন্দোলন বলতে কী বোঝো?
- ইউরোপীয় ধর্ম-সংস্কার আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা করো।
- ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ওয়াইক্লিপের অবদান কী ছিল?
- ধর্মসংস্কার আন্দোলনের জন হাসের ভূমিকা কী ছিল?
- ধর্মসংস্কার আন্দোলনে ইরাসমাসের অবদান কী ছিল?
- মার্টিন লুথারের পঁচানব্বই গবেষণাপত্র কী?
- ওয়ার্মসের সভা কী?
- অগসবার্গের সন্ধির শর্তগুলো কী ছিল?
- অ্যানাব্যাপস্টিক আন্দোলন কী?
- প্রতিসংস্কার আন্দোলন বলতে কী বোঝো?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন