প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থানের ওপর একটি প্রবন্ধ রচনা করো।
সমাজে নারীর অবস্থান :
প্রাচীনকালে গ্রীস ও রোমের মত ভারতীয় নারীরাও সমাজে বিশিষ্ট স্থান অধিকার লাভ করেছিল। তবে তা মূলত উচ্চশ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
- ঋগবৈদিক যুগে নারীর অবস্থান :
- নারীর গুরুত্ব : পুত্র সন্তান কাম্য হলেও নারীরা মেটেও অবহেলিত ছিল না।
- নারী শিক্ষা : নারীরা যথেষ্ট শিক্ষার সুযোগ লাভ করেছিল। এ যুগের উল্লেখযোগ্য বিদুষী নারী ছিলেন - লোপমুদ্রা, ঘোষা, অপলা মমতা প্রমুখ।
- বেদ পাঠের অধিকার : এই সময় নারীদের বেদ পাঠের অধিকার ছিল বলেও জানা যায়। এমনকী বেদের স্তোত্র রচনায় অংশ নিয়েছিল বলে জানা যায়।
- পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থান :
- নারীর গুরুত্ব হ্রাস : এই সময় নারী বেদ পাঠের অধিকার হারায়।
- নারী শিক্ষা উপেক্ষিত : তৈত্তিরীয় সংহিতায় নারী শিক্ষার প্রয়োজন নেই বলে জানান হয়। ফলে নারী শিক্ষা ব্যাহত হয়। তা সত্ত্বেও এ সময় কোন কোন নারী উচ্চশিক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। যেমন, গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রমুখ।
- প্রতিবাদী আন্দোলনের যুগে নারীর অবস্থান :
- নারী শিক্ষা : বৌদ্ধ গ্রন্থ বিনয়পিটক থেকে জানা যায় এই সময় নারীদের বিদ্যা শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। চন্দনা, জয়ন্তী এ যুগের উচ্চশিক্ষিত নারী ছিলেন
- সংস্কৃতি চর্চা : এই সময় নারীরা সঙ্গীত, কাব্য ও নাটক রচনায় খ্যাতি লাভ করেছিলেন।
- মৌর্য যুগে নারীর অবস্থান :
- নারীর গুরুত্ব : মৌর্য যুগে নারীর মর্যাদা বেড়েছিল। তারা রাজকার্যে অংশ নিতে পারত ।
- নারীর শিক্ষা : অর্থ শাস্ত্র মতে, অভিজাত শ্রেণির নারীরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারত। তবে তারা পর্দা প্রথা মেনে চলতেন।
- সংস্কৃতি চর্চা : সমকালীন সংস্কৃত সাহিত্য থেকে জানা যায়, এযুগের মেয়েরা সংগীত রচনায় এবং চিত্রশিল্পে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।
- মৌর্য-পরবর্তী যুগে নারীর অবস্থান :
- নারীর গুরুত্ব : বৈদিক ভাষ্যকার জৈমিনির দেওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে এই সময় মেয়েদের যাকযজ্ঞে অংশ নেওয়ার অধিকার ছিল না। কারণ, তারা অশিক্ষিত।
- নারীর শিক্ষা : পাণিনির লেখা থেকে জানা যাচ্ছে, মেয়েরা বেদ পাঠ করতে পারতেন। জৈনশাস্ত্র থেকে জানা যাচ্ছে, কৌশাম্বীর রাজ কন্যা জয়ন্তী আজীবন অবিবাহিত থেকে বিদ্যাচর্চা করেছেন।
- সংস্কৃতি চর্চা : কেউ কেউ দাবি করেন, চল রাজাদের যুদ্ধ জয়কে কেন্দ্র করে একজন মহিলা কবি উত্কৃষ্ট মনের সাহিত্য রচনা করেছিলেন।
- গুপ্তযুগে নারীর অবস্থান :
- নারীর গুরুত্ব : বিভিন্ন সাহিত্য থেকে জানা যায়, এই সময় সমাজে নারীর মর্যাদা হ্রাস পায়। তবে উচ্চ বংশের মেয়েদের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার কথা জানা যায়। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মেয়ে এক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে আছে।
- নারীর শিক্ষা : সাধারণ দরিদ্র নারীদের ক্ষেত্রে শিক্ষা গ্রহণের কোন সুযোগ ছিল না। তবে উচ্চ বংশের মেয়র শিক্ষা লাভের সুযোগ পেত। আদর্শ পত্নীকে সুশিক্ষিত হওয়ার বিধান রয়েছে কামসূত্র গ্রন্থে।
- সংস্কৃতি চর্চা : সমকালীন সাহিত্য থেকে জানা যায় এই যুগের মেয়ের ধর্ম চর্চার পাশাপাশি কাব্য চর্চার সুযোগ পেত আশ্রমবাসীর ।
- গুপ্ত-পরবর্তী যুগে নারীর অবস্থা :
- নারীর গুরুত্ব : নারীর মর্যাদা গুপ্ত যুগের মতই ছিল।
- নারীর শিক্ষা : শিক্ষা ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে । উচ্চ বংশের মেয়ের শিক্ষা সুযোগ পেলেও সাধারণ ঘরের মেয়েরা সে সুযোগ পেত না।
- সংস্কৃতি চর্চা : হর্ষবর্ধনের আমলে নারীদের মধ্যে নৃত্য, সংগীত, চিত্রকলা প্রভৃতি চর্চার কথা বাণভট্টের লেখা থেকে জানা যায়। হর্ষবর্ধনের ভগিনী রাজ্যশ্রী এ বিষয়ে খ্যাতি অর্জন করেন।
সুতরাং ঋগবৈদিক যুগে ভারতীয় নারী সমাজ যে মর্যাদার অধিকারী ছিলেন,
- পরবর্তীকালে তা বহুগুণে হ্রাস পায়।
- শিক্ষা গ্রহণের ধারা অব্যহত থাকলেও তা মর্যাদায় পুরুষের সমকক্ষ হতে পারেনি। এবং
- উচ্চ বংশের মেয়ের কিছুটা শিক্ষার আলোয় এলেও সাধারণ দরিদ্র ঘরের মেয়ের বঞ্চিতই ছিল।
----------- শেষ -----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন