ইউরোপীয় নবজাগরণ বলতে কী বোঝো? নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য লেখো।
ইউরোপীয় নবজাগরণ বলতে কী বোঝো? |
‘রেনেসাঁ’ শব্দের অর্থ হলো ‘নবজাগরণ’। পঞ্চদশ শতকের ইউরোপে গ্রিক ও ল্যাতিন ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাবে সেখানকার সাহিত্য, ললিতকলা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শন সহ নানান ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। ইউরোপীয় ভাবজগতে জন্ম হয় এক নতুন চেতনার। এই নতুন চেতনার আলোকে ইউরোপের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে, তা এক কথায় ‘রেনেসাঁ’ বা ‘নবজাগরণ’ নামে পরিচিত।
প্রকৃতপক্ষে, এই সময় ইউরোপীয় চিন্তা ও চেতনার জগতে এক উদারনৈতিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তিবাদী ভাবধারার বিকাশ ঘটে। এই নতুন ভাবধারাই ইউরোপের ইতিহাসে রেনেসাঁ বা নবজাগরণ বা নবজাগৃতি নামে খ্যাতি লাভ করেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইউরোপীয় নবজাগরণকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন। এই পর্যায়েগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দুটি পর্যায় হল :
১) খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকের নবজাগরণ এবং
২) খ্রিস্টীয় পঞ্চমদশ শতকের নবজাগরণ।
তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে, আধুনিক অর্থে নবজাগরণ হল, ইতালীর ফ্লোরেন্স নগরীকে কেন্দ্র করে পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি যুক্তিবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী ও উদারনৈতিক চিন্তা চেতনার বিকাশের মধ্য দিয়ে ইউরোপের রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে তা-ই রেনেসাঁ বা নবজাগরণ নামে পরিচিত।
এক কথায় নবজাগরণকে বুঝতে হলে, এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের কথা মনে রাখতে হবে। বৈশিষ্ট্যগুলি হল :
- নবজাগরণ মানুষের চিন্তা ও চেতনায় যুক্তিবাদের প্রসার ঘটায়,
- মানবতাবাদ ও মানবকেন্দ্রিক চিন্তা চেতনার প্রসার ঘটায়,
- অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারমুক্ত প্রগতিশীল সমাজের উত্থানকে ত্বরান্বিত করে,
- শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার বিষয়বস্তু হিসেবে ধর্ম ও ঈশ্বরের পরিবর্তে মানুষ ও তার জীবনযন্ত্রণা অগ্রাধিকার পেতে থাকে, এবং
- সর্বোপরি বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটে এবং তাকে মানব কল্যাণে ব্যবহার করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
এক কথায় নবজাগরণের প্রভাবে মানব সমাজে ও রাষ্ট্রীয় জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আসে।
--------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন