সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ওয়াইক্লিফের অবদান

ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ওয়াইক্লিফের অবদান কী ছিল? ধর্মসংস্কার আন্দোলনে জন ওয়াইক্লিফের অবদান অধ্যাপক জন ওয়াইক্লিফ ছিলেন ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনিই প্রথম ক্যাথলিক চার্চ ও পোপতন্ত্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। আর এ কারণে তিনি ‘ ধর্মসংস্কার আন্দোলনের শুকতারা’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। ইংল্যান্ড তথা ইউরোপের ধর্মসংস্কার আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।  যাজকের বিরোধিতা : জন ওয়াইক্লিফ বলেন, প্রতিটি মানুষই ঈশ্বরের কাছে সমান। তাই ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক আছে। এবং সে কারণেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার জন্য যাজকের কোন প্রয়োজন নেই। মানুষ নিজে নিজেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারে।  বাইবেলের অনুবাদ : তিনি নিজে একজন ধর্মযাজক হয়েও পোপ ও যাজকদের দুর্নীতি , অর্থলোলুপতা , আড়ম্বরপ্রিয়তা এবং নৈতিক অধঃপতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে তিনি ইংরেজি ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করে তা জনসাধারণের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করেছিলেন। ফলে সাধারণ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মের মূল নীতি সম্পর্কে জানত...

ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি

ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি আলোচনা করো। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে ইউরোপে প্রচলিত পোপতন্ত্র এবং রোমান ক্যাথলিক চার্চের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, দুর্নীতি, অনাচার ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এক তীব্র সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। খ্রিষ্টান ক্যাথলিক চার্চ-বিরোধী এই আন্দোলন ‘ ধর্মসংস্কার আন্দোলন ’ নামে পরিচিত। কোন কোন ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে ‘ ধর্মবিপ্লব’ বলেও অভিহিত করেছেন। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি : কোন একটি নির্দিষ্ট কারণে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়নি। এর পিছনে ছিল বিভিন্ন রকমের আর্থ-সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কারণ। ১) নবজাগরণের প্রভাব : খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের  ইউরোপে, বিশেষ করে ইতালিকে কেন্দ্র করে, ইউরোপীয় চিন্তা-জগতে ‘ নবজাগরণ ’ ঘটে। ফলে মানুষ যুক্তিবাদী হয়ে ওঠে। এই যুক্তিবাদী মানুষের মধ্যে স্বাধীনচিন্তা, সমালোচনামূলক মনোভাব, ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি গড়ে ওঠায় তারা গির্জার দুর্নীতি , অনাচার ও স্বৈরাচারী মনোভাব- এর   বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়।  ২) স্কুলমেন দর্শনের প্রভাব : ইউরোপে একাদশ দ্বাদশ শতকে খ্রিস্টানধর্মকে যুক্তি-তর...

ইউরোপীয় ধর্মসংস্কার আন্দোলন কী?

 ধর্মসংস্কার আন্দোলন কী? ইউরোপীয় ধর্মসংস্কার আন্দোলন কী? খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যীশুখ্রীষ্টের হাত ধরেই রোমান ক্যাথোলিক চার্চের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এই চার্চের প্রধান হলেন পোপ। এবং তিনিই খ্রিস্টান ধর্মের প্রধান ধর্মগুরু। পোপকে কেন্দ্র করে পরিচালিত ক্যাথলিক চার্চ এবং তার ব্যবস্থাপানাকে এক কথায় বলা হয় পোপতন্ত্র । মধ্যযুগের শেষ দিকে, খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে, পোপতন্ত্র অত্যন্ত দুর্নীতি , অনাচার ও কুসংস্কারে ভরে ওঠে। চার্চের যাজকেরা স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর বিভিন্নভাবে শোষণ ও নির্যাতন চালাতে থাকে। যে সংস্থা সাধারণ মানুষের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের উদ্দেশ্যে তার কার্যকলাপ পরিচালনা করতো, তা ক্রমে হয়ে ওঠে অমঙ্গলের প্রতীক।  এমত অবস্থায়, ১৫ শতকে নবজাগরণের প্রভাবে ইউরোপের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে পরিবর্তনের সাথে সাথে ধর্মীয় জীবনেও এক বিরাট পরিবর্তন আসে। এই সময়ে মানুষের মধ্যে যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনার প্রসার ঘটলে তাদের চিন্তাজগতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর ফলে সাধারণ মানুষ ক্রমে চার্চ ও যাজকদের দুর্নীতি সম্পর্কে অবহিত হয়ে ওঠে। এবং এ কারণে তারা চার্চের সংস্কার ও সংশ...

নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব কী ছিল?

নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব কী ছিল? নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব কী ছিল? পঞ্চদশ শতকের ইতালির নবজাগরণ সমকালীন ইউরোপীয় সাহিত্য, শিল্পকলা, ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শন ও সমাজ-সংস্কৃতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল। এই পরিবর্তন দু'ভাবে পরিলক্ষিত হয় - ইতিবাচক এবং নেতিবাচক। নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাব : নবজাগরণের ইতিবাচক প্রভাবগুলো হল : ইতিহাসচর্চায় প্রভাব : নবজাগরণের প্রভাবে ইতিহাস চর্চায় ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির উদ্ভব হয়। এই নতুন ইতিহাস দর্শনের প্রবক্তা ছিলেন লিওনার্দো ব্রোনি, ফ্রানচেথকো গুইচিয়ারদিনি ও ফ্ল্যাবিও বিয়োন্দ। সাহিত্যচর্চায় প্রভাব : এতদিন ইউরোপে শুধুমাত্র গ্রিক, রোমান ও ল্যাটিন ভাষার চর্চা হত। কিন্তু নবজাগরণের কল্যাণে মাতৃভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। সাহিত্যের বিষয় হিসেবে ঈশ্বর বন্দনার জায়গায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়া বিষয় হিসাবে গুরুত্ব পায়। দান্তে আলীগিরি, ফ্রান্সিস্কো পেত্রার্ক, জিওভান্নি বোকাচ্চিও, জিওফ্রে চসার, এডমান্ড স্পেন্সার, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার প্রমুখ সাহিত্যিক এই পর্বে মাতৃভাষায় সাহিত্যচর্চা করে খ্যাতি লাভ করেন। শিল্পকলায় প্রভাব ...

ইউরোপীয় নবজাগরণ বলতে কী বোঝো?

ইউরোপীয় নবজাগরণ বলতে কী বোঝো? নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য লেখো। ইউরোপীয় নবজাগরণ বলতে কী বোঝো? ‘ রেনেসাঁ ’ শব্দের অর্থ হলো ‘ নবজাগরণ ’। পঞ্চদশ শতকের ইউরোপে গ্রিক ও ল্যাতিন ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাবে সেখানকার সাহিত্য, ললিতকলা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শন সহ নানান ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। ইউরোপীয় ভাবজগতে জন্ম হয় এক নতুন চেতনার। এই নতুন চেতনার আলোকে ইউরোপের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে, তা এক কথায় ‘ রেনেসাঁ’ বা ‘ নবজাগরণ ’ নামে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে, এই সময় ইউরোপীয় চিন্তা ও চেতনার জগতে এক উদারনৈতিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তিবাদী ভাবধারার বিকাশ ঘটে। এই নতুন ভাবধারাই ইউরোপের ইতিহাসে রেনেসাঁ বা নবজাগরণ বা নবজাগৃতি নামে খ্যাতি লাভ করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইউরোপীয় নবজাগরণকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন। এই পর্যায়েগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দুটি পর্যায় হল : ১) খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকের নবজাগরণ এবং  ২) খ্রিস্টীয় পঞ্চমদশ শতকের নবজাগরণ। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে, আধুনিক অর্থে নবজাগরণ হল, ইতালীর ফ্লোরেন্স নগরীকে কেন্দ্র করে পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি য...

ক্রুসেডে খ্রিষ্টানদের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল?

ক্রুসেডে খ্রিষ্টানদের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল? ক্রুসেডে খ্রিষ্টানদের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল? প্রায় দুশো বছর ধরে আটটি ক্রুসেডে অংশ নিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হওয়ার পরও জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করা খ্রিস্টানদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাদের এই ব্যর্থতার পিছনে ছিল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ।  ক্রুসেড ব্যর্থ হওয়ার কারণ : বাস্তব চিন্তাভাবনার অভাব : ক্রুসেডকে সফল করার জন্য যে বাস্তব চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল তা ক্রুসেডারদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে, সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন দখল করেও তার নিয়ন্ত্রণ তারা ধরে রাখতে পারেনি।  দুর্বল সংগঠন : ক্রুসেড বাহিনী সাংগঠনিকভাবে দুর্বল ছিল। ধর্ম যোদ্ধাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল কৃষক ও সাধারণ মানুষ। তাদের না-ছিল সামরিক শিক্ষা, না-ছিল আধুনিক হাতিয়ার।   বোঝাপড়ার অভাব : ক্রুসেডে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব ছিল। এমনকি শেষের দিকে ক্রুসেড নিয়ে পোপ ও ইউরোপীয় রাজাদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়। শাসকবর্গের অনাগ্রহ : অনেক ইউরোপীয় রাজা তাদের রাজত্ব ছেড়ে দীর্ঘদিন ক্রুসেডে যুক্ত থাকতে চাননি। ক্রুসেডের প্রতি অনীহা : দী...

ক্রুসেডের ফলাফল আলোচনা করো

ক্রুসেড কী? ক্রুসেডের ফলাফল লেখো। ক্রুসেডের ফলাফল আলোচনা করো সংসদ নমুনা প্রশ্ন — ২০২৪ ১০৯৬ থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত, প্রায় দু’শো বছর ধরে, জেরুজালেম পুনরুদ্ধারকে কেন্দ্র করে খ্রিস্টান ও মুসলিম শাসকদের মধ্যে যে তুমুল যুদ্ধ চলেছিল তা  ‘ ক্রুসেড ’  বা ‘ ধর্মযুদ্ধ’  নামে পরিচিত।  মধ্যযুগের ইউরোপের সমাজ , সভ্যতা , রাষ্ট্র , সংস্কৃতি প্রভৃতির উপর ক্রুসেডের প্রভাব বা ফলাফল ছিল সুগভীর এবং সুদূরপ্রসারী।  রাজনৈতিক ফলাফল : সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয় : ক্রুসেডের যোগ দিয়ে সামন্ত প্রভুরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিল। ফলে সামন্ততন্ত্রের আর্থিক ভিত্তি নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া অসংখ্য ভূমিদাস ও বহু সামন্ত প্রভুর মৃত্যু হয়। ফলে সামন্ততন্ত্র ভেঙে পড়ে।  জাতীয় রাষ্ট্রের গঠন : ক্রুসেড সামন্ত প্রভুদের অবক্ষয়ের সাথে সাথে রাজাকে শক্তিশালী করে তুলেছিল। ফলে রাজাদের অধীনে ইউরোপে একটি রাজনৈতিক ঐক্যের বাতাবরণ সৃষ্টি হয় যা জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম করে দেয়। অর্থনৈতিক ফলাফল : শিল্পের বিকাশ : ক্রুসেডের ফলে সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয়ের ফলে মধ্যযুগের সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটে এবং শি...

ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ

ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ কী? ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ জেরুজালেম খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে ‘ পবিত্র ভূমি’ বলে পরিচিত। এই পবিত্র ভূমি পুনরুদ্ধার করাকে কেন্দ্র করে ১০৯৬ থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত, প্রায় দু’শো বছর ধরে, খ্রিস্টান ও মুসলিম শাসকদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধ ‘ ক্রুসেড’ বা ‘ ধর্মযুদ্ধ’  নামে পরিচিত। এই যুদ্ধের পিছনে ছিল নানান গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও  সামাজিক কারণ - এর সাথে সাথে, ঐতিহাসিক পি কে হিট্টি , অর্থনৈতিক কারণকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন।  ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ : বস্তুত ক্রুসেড সংগঠনে অর্থনৈতিক কারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বাণিজ্য পথ উদ্ধারের চেষ্টা : তুর্কি শাসকরা ভূমধ্যসাগরের পূর্বতীরবর্তী দেশগুলি দখল করে নিলে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের জলপথে বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, মুসলমান বণিকদের কাছ থেকে ইউরোপীয় বণিকদের চড়া দামে প্রাচ্যের মসলাপাতি ও বিলাস দ্রব্যাদি ক্রয় করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে ভূমধ্যসাগরের পূর্বাংশ, যে অংশে জেরুজালেম অবস্থিত, পুনরুদ্ধার করতে ইতালিয় বণিকরা উদগ্রীব হয়ে ওঠে। ফলে তারা...

ক্রুসেডের সামাজিক কারণ

ক্রুসেডের সামাজিক কারণ কী ছিল? ক্রুসেডের সামাজিক কারণ ১০৭১ সালে ‘ মেনজিকার্টের যুদ্ধে’ র মাধ্যমে সেলজুক তুর্কিরা জেরুজালেম সহ সমগ্র প্যালেস্টাইন দখল করে নেয়।  ফলে ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষরা তাদের ‘ পবিত্র ভূমি’ জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে তুর্কি মুসলিমদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করে। ১০৯৬ থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ২০০ বছর ধরে চলা এই ধর্মীয় যুদ্ধ অভিযান ‘ ক্রুসেড’ নামে পরিচিত। মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধাদের এই যুদ্ধের পিছনে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।  ‘ক্রুসেড’-এর সামাজিক কারণ : বস্তুত ইউরোপের সামন্ততান্ত্রিক সমাজের সঙ্গে কঠোর শৃংখলে আবদ্ধ দরিদ্র মানুষগুলি ক্রুসেড-এর মাধ্যমে নিজেদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখে। দাসত্ব থেকে মুক্তি :   যে কোনো ক্রুসেডের আগে প্রচার করা হতো যে, ক্রুসেডে যোগদানকারী ভূমিদাসদের যুদ্ধের পর মুক্তি দেয়া হবে। ফলে দাসত্ব থেকে মুক্তির আশায় হাজার হাজার ভূমিদাস ক্রুসেডে অংশ নেওয়ায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি : সমাজে ...

ক্রুসেডের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল?

ক্রুসেডের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল? ক্রুসেডের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল? ১০৭১ সালে ‘ মেঞ্জিকার্টের যুদ্ধে ’ বাইজানটাইন সম্রাট চতুর্থ রোমানোস  তুর্কি সুলতান আলপ আর্সনালের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। ফলে আনাতোলিয়া সহ সমগ্র প্যালেস্টাইন সম্রাটের হস্তচ্যুত হয়। পরবর্তীকালে সম্রাট আলেক্সিয়াস কমনিনাস সেলজুক তুর্কিদের হাত থেকে খ্রিস্টান ধর্ম ও রোমের সিংহাসন বাঁচানোর তাগিদে পোপ সপ্তম গ্রেগোরির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও পোপ সপ্তম গ্রেগরি কিছুই করে উঠতে পারেননি। ১০৯১ সালে পোপ দ্বিতীয় আরবান  সম্রাটের আহবানে সাড়া দেন। পোপের লক্ষ্য ছিল সম্রাটের এই সংকটকালে ধর্মযুদ্ধের ডাক দিয়ে খ্রিস্টান জগতে তাঁর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব স্থাপন করা। মূলত এই উদ্দেশ্য নিয়েই ১০৯৫ সালে ফ্রান্সের ক্লেরমন্ট শহরে এক ধর্মসভা আহ্বান করেন। এই সভায় ও দ্বিতীয় আরবান পবিত্র তীর্থভূমি জেরুজালেম উদ্ধারের লক্ষ্যে সমস্ত স্তরের খ্রিস্টানদের ধর্ম যুদ্ধে আহ্বান করেন। ফলে, জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়ে যায় ক্রুসেড, যা প্রায় দীর্ঘ দুশো বছর ধরে ইউরোপকে অশান্ত করে রেখেছিল। সুতরাং রোমান সম...

ক্রুসেড কী? ক্রুসেডের উদ্দেশ্য কী ছিল?

ক্রুসেড কী? ক্রুসেডের উদ্দেশ্য কী ছিল? ক্রুসেড বলতে কী বোঝো? ক্রুসেড কী? ক্রুসেডের উদ্দেশ্য কী ছিল? ‘ ক্রুসেড ’ কথার অর্থ হলো ধর্মযুদ্ধ। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যীশু খ্রীষ্টের জন্মস্থান হিসেবে খ্যাত জেরুজালেম খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে ‘ পবিত্র ভূমি ’ বলে বিবেচিত হয়।  কিন্তু ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের পর প্রথমে খলিফা ওমর জেরুজালেম এবং পরবর্তীকালে ১০৭১ সালে তুর্কি শাসক আলাপ আর্সলান জেরুজালেম সহ সমগ্র প্যালেস্টাইন দখল করে নেয়। ইউরোপের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী শাসক আলেক্সিয়াস কমনিনাস ও পোপ দ্বিতীয় আরবান এই পবিত্র ভূমি পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে তুর্কি সুলতানদের বিরুদ্ধে ১০৯৬ থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০ বছর ধরে যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করে। এই ধর্মীয় যুদ্ধ অভিযান ‘ ক্রুসেড ’ বা ‘ ধর্মযুদ্ধ ’ নামে পরিচিত।  ক্রুসেডের উদ্দেশ্য : সুতরাং ক্রুসেডের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তুর্কিদের হাত থেকে জেরুজালেম উদ্ধার ও তার পবিত্রতা রক্ষা করা । তবে, ক্রুসেডের কারণ বিশ্লেষণ করলে এর আরও কিছু উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে : পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যকে তুর্কিদের হাত থেকে রক্ষা করা, পোপের হারানো গৌরব ও মর্...

ইক্তা কী ? ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন

ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন আলোচনা করো। ইক্তা কী ? ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন ইক্তা কী : সুলতানি যুগে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা ইক্তা নামে পরিচিত ছিল। ‘ইক্তা’ শব্দের অর্থ হল ‘এক অংশ’ বা ‘এক ভাগ’। ঐতিহাসিক ড. ইরফান হাবিবের মতে, “ইসলামের বিধান অনুসারে কৃষকের উৎপন্ন ফসলের উদ্বৃত্তের একাংশ কর হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং তা প্রাদেশিক মুসলিম শাসকদের মধ্যে বন্টন করা হয়। এই প্রথাকে ইক্তা প্রথা বলা হয়।” ইক্তা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য : সুলতান ইলতুতমিস ভারতে ইক্তা ব্যবস্থার প্রচলন করেন। এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল মূলত : সুলতানি অধিকৃত অঞ্চলগুলির উপর কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটানো। সাম্রাজ্যে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। আমির-ওমরাহদের সন্তুষ্ট করে সাম্রাজ্যে বিদ্রোহের আশঙ্কা দূর করা। ঐতিহাসিক কে.এ. নিজামি লিখেছেন, “ভারতের সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য দিল্লির প্রথম দিকের তুর্কি সুলতানগন বিশেষ করে ইলতুৎমিস ইক্তা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন।” ইক্তা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য : ইক্তা ব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করলে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লক্...

রুশোর রাষ্ট্রদর্শন ও তার মূল্যায়ন

রুশোর রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করো। রুশোর রাষ্ট্রদর্শন ও তার মূল্যায়ন আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জগতে এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব হলেন ফরাসি চিন্তাবিদ ও দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো। তাঁর রাষ্ট্রদর্শন পরবর্তীকালে ইউরোপের জ্ঞানদীপ্তির যুগ এবং বিশেষত ফরাসি বিপ্লবকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। রুশোর রাষ্ট্রদর্শনের উৎস : প্লেটোর প্রভাব : রুশোর রাষ্ট্রচিন্তার ওপর প্লেটোর চিন্তাধারার গভীর প্রভাব পড়েছিল। প্লেটোর রাজনৈতিক আনুগত্য , যা আইন ও শক্তির উৎস হিসাবে বিবেচিত এবং লোকসমাজ , যা নৈতিক মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে। রুশো প্লেটোর এই মৌলিক চিন্তাধারার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বলেছিলেন, "সমাজ ছাড়া ব্যক্তির পক্ষে কোনও ক্ষমতা অর্জন সম্ভব নয়।" লকের প্রভাব : অন্যদিকে জন লকের স্বাভাবিক অধিকার , সম্মতির তত্ত্ব , লোকসমাজের সর্বভৌমিকতা প্রভৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ল্যাস্কির মতে, "রুশোর শিক্ষাটি লকের খনন করা চ্যানেলের একটি বিস্তৃত সমাপ্তি মাত্র।" ("Rousseau's teaching is only a broad endingof the channel dug by Locke.") তবে, মনে ...

নতুন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সপ্তম হেনবির অবদান

‘নতুন রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠায় সপ্তম হেনবির অবদান কী ছিল? নতুন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সপ্তম হেনবির অবদান সপ্তম হেনরি ছিলেন ইংল্যান্ডের টিউডর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। ১৪৮৫ সালে তিনি যে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, তা ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ‘নতুন রাজতন্ত্র’ বা ‘ নব্য রাজতন্ত্র ’ নামে পরিচিত। এটা তিনি সম্ভব করেছিলেন, ইংল্যান্ডের শাসনতন্ত্রে বেশ কিছু অভিনব পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে। যেমন, ১) ব্যারনদের ক্ষমতা হ্রাস :  এর আগে ইংল্যান্ডের রাজপরিবারগুলোর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে সামন্তপ্রভুরা (ব্যারন) নিজেদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করতেন। সপ্তম হেনরি এদের পরিবর্তে স্পেন, ফ্রান্স ও স্কটল্যান্ডের রাজপরিবারগুলির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের নীতি গ্রহণ করেন। ফলে ব্যারনদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। ২) সামন্ত প্রভুদের দমন :  ১৪৮৭ সালে তিনি ‘ স্টার চেম্বার আইন ’ পাস করে সামন্তপ্রভুদের ব্যক্তিগত সেনাবাহিনী রাখার প্রথা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেন। ৩) মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মর্যাদা বৃদ্ধি : সরকারি উচ্চপদ ও মন্ত্রীপদে অভিজাত সামন্তদের নিয়োগ না করে তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে উচ্চপদে নিয়োগের ...

ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য

ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো। ম্যাকিয়াভেলির রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য মেকিয়াভেলি হচ্ছেন একজন আদি-আধুনিক (Early Modern) রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। জন্ম ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে,  ১৪৬৯ সালে। তিনি ছিলেন একাধারে একজন কৃতি নাট্যকার, ঐতিহাসিক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ। আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি প্রতিষ্ঠার কারণে তিনি ‘ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক ’ হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছেন। মেকিয়াভেলির রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্য : নিকোলো মেকিয়াভেলি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ দ্য প্রিন্স ’-এ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন।     ১)  মানব প্রকৃতি : ‘দা প্রিন্স’ গ্রন্থে ম্যাকিয়াভেলি মানুষকে একটি আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর, লোভী, সুবিধাবাদী ও ন্যায়নীতিবোধহীন চরিত্ররূপে বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, এই কারণে মানুষে মানুষে বিবাদ ও সংঘর্ষ দেখা দেয় এবং রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।     ২)  ধর্ম ও নীতিবোধ :   ম্যাকিয়াভেলি ধর্ম ও নীতিবোদের সঙ্গে রাষ্ট্রনীতির পার্থক্য সুস্পষ্ট করেছেন।  তাঁর মতে শাসক তাঁর ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস ও নীতিবোধের উর্ধ্বে উঠে কঠোরভ...