ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ কী?
ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ |
জেরুজালেম খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছে ‘পবিত্র ভূমি’ বলে পরিচিত। এই পবিত্র ভূমি পুনরুদ্ধার করাকে কেন্দ্র করে ১০৯৬ থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত, প্রায় দু’শো বছর ধরে, খ্রিস্টান ও মুসলিম শাসকদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধ ‘ক্রুসেড’ বা ‘ধর্মযুদ্ধ’ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধের পিছনে ছিল নানান গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণ-এর সাথে সাথে, ঐতিহাসিক পি কে হিট্টি, অর্থনৈতিক কারণকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন।
ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ :
বস্তুত ক্রুসেড সংগঠনে অর্থনৈতিক কারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
- বাণিজ্য পথ উদ্ধারের চেষ্টা : তুর্কি শাসকরা ভূমধ্যসাগরের পূর্বতীরবর্তী দেশগুলি দখল করে নিলে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের জলপথে বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, মুসলমান বণিকদের কাছ থেকে ইউরোপীয় বণিকদের চড়া দামে প্রাচ্যের মসলাপাতি ও বিলাস দ্রব্যাদি ক্রয় করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে ভূমধ্যসাগরের পূর্বাংশ, যে অংশে জেরুজালেম অবস্থিত, পুনরুদ্ধার করতে ইতালিয় বণিকরা উদগ্রীব হয়ে ওঠে। ফলে তারা ক্রুসেডারদের সর্বতোভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে।
- অভিজাতদের স্বপ্ন পূরণ : ইউরোপের ধনী অভিজাত শ্রেণির মানুষেরা আরও ধনী ও সম্পদশালী হওয়ার স্বপ্ন দেখত। এই অবস্থায় ক্রুসেডকে তারা তাদের স্বপ্নপূরণের চাবিকাঠি বলে ভাবতে শুরু করে। ফলে ধর্মযুদ্ধকে তারা সমর্থন দেয়। অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে দুর্বল অভিজাতরা যুদ্ধের সময় লুটতরাজ-এর মাধ্যমে তারা তাদের সম্পদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করে।
- সামন্ত প্রভুদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা : ইউরোপের সামন্ত প্রভুদের একাংশ চেয়েছিল ধর্মযুদ্ধের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে। যুদ্ধের সময় তারা লুন্ঠিত সম্পদ দখলে নিয়ে নিজেদের সম্পদশালী করে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং এ কারণেই তারা ক্রুসেডকে সমর্থন করে।
- জনসংখ্যার চাপ : খ্রিস্টীয় দশম শতকের শেষ দিকে ইউরোপের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। কিন্তু বর্ধিত জনসংখ্যার অনুপাতে চাষযোগ্য জমি বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ফলে বহু মানুষ ভূমিহীন কৃষকের পরিণত হয়। বিকল্প আয়ের তেমন সুযোগ না থাকায়, মানুষের মনে তীব্র অস্থিরতা ও অসন্তোষ তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই ধর্মযুদ্ধের আহ্বানে সাড়া দিয়ে, দেশের বাইরে গিয়ে, ভাগ্য ফেরানোর আশা করে। ফলে অসংখ্য মানুষ ক্রুসেডে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
সুতরাং এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ধর্মীয় কারণ ক্রুসেডের অন্যতম কারণ হলেও অর্থনৈতিক কারণ ক্রুসেড সংগঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক পি কে হিট্টি বলেছেন, “চার্চের ক্রুশ, সৈনিকের তলোয়ার এবং বণিকদের অর্থ মিলিত হয়ে ক্রুসেডের সূত্রপাত করেছিল।”
-----------xx----------
এই প্রশ্নটি অন্য যেভাবে আসতে পারে :
- ক্রুসেড সংগঠনে অর্থনৈতিক কারণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
- মধ্যযুগের ইউরোপে ক্রুসেড শুরু হওয়ার পিছনে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কতটা দায়ী ছিল?
- কাকে কেন ‘পবিত্র ভূমি’ বলা হয়? পবিত্র ভূমি উদ্ধারের পিছনে অর্থনৈতিক কারণ কতটা ভূমিকা রেখেছিল?
এই বিষয়ে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর :
- ক্রুসেডের সামাজিক কারণ কী?
- ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ কী?
- ক্রুসেডের উদ্দেশ্য কী?
- ক্রুসেডে নারীদের অবদান কী ছিল?
- ক্রুসেডের খ্রিষ্টানদের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল?
- ক্রুসেডের ফলে পোপের ক্ষমতা কীভাবে বৃদ্ধি পায়?
- ক্রুসেড কীভাবে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন