ক্রুসেডের সামাজিক কারণ কী ছিল?
ক্রুসেডের সামাজিক কারণ |
১০৭১ সালে ‘মেনজিকার্টের যুদ্ধে’র মাধ্যমে সেলজুক তুর্কিরা জেরুজালেম সহ সমগ্র প্যালেস্টাইন দখল করে নেয়। ফলে ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষরা তাদের ‘পবিত্র ভূমি’ জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে তুর্কি মুসলিমদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করে। ১০৯৬ থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ২০০ বছর ধরে চলা এই ধর্মীয় যুদ্ধ অভিযান ‘ক্রুসেড’ নামে পরিচিত।
মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধাদের এই যুদ্ধের পিছনে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
‘ক্রুসেড’-এর সামাজিক কারণ :
বস্তুত ইউরোপের সামন্ততান্ত্রিক সমাজের সঙ্গে কঠোর শৃংখলে আবদ্ধ দরিদ্র মানুষগুলি ক্রুসেড-এর মাধ্যমে নিজেদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখে।
- দাসত্ব থেকে মুক্তি : যে কোনো ক্রুসেডের আগে প্রচার করা হতো যে, ক্রুসেডে যোগদানকারী ভূমিদাসদের যুদ্ধের পর মুক্তি দেয়া হবে। ফলে দাসত্ব থেকে মুক্তির আশায় হাজার হাজার ভূমিদাস ক্রুসেডে অংশ নেওয়ায় আগ্রহী হয়ে ওঠে।
- জনসংখ্যা বৃদ্ধি : সমাজে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কাজের অভাব দেখা দেয়। ফলে সামাজিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে পোপ সামাজিক সংহতি রক্ষার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাকে ক্রুসেডের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
- জীবন জীবিকার উন্নতি : মধ্যযুগে ইউরোপের সাধারণ দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষ নিজেদের জীবন জীবিকার অনিশ্চয়তা নিয়ে জীবনযাপন করত। ক্রুসেডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা তাদের জীবনের মান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন তাদের ক্রুসেডে আগ্রহী করে তোলে।
- ঋণ মুক্তির স্বপ্ন : মধ্যযুগে ইউরোপের হতদরিদ্র সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য ঋণের জালে আটকে পড়ত। ক্রুসেডে যোগদানের মাধ্যমে তাদের এই ঋণ থেকে মুক্তির সুযোগ আসে।
- নাইটদের উদ্যোগ : মধ্যযুগে নাইটরা বীরযোদ্ধা হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিল। দেশ, জাতি ও ধর্ম রক্ষায় আত্মত্যাগ করা তাঁদের কাছে গর্বের কাজ হিসেবে বিবেচিত হতো। তুর্কি মুসলমানদের কাছ থেকে খ্রিস্টান জগতকে রক্ষা করা এবং পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে পুনরুদ্ধার করাকে তাঁরা তাঁদের অবশ্য কর্তব্য হিসাবে ঘোষণা করে।
- পাপমুক্তির ঘোষণা : পোপ দ্বিতীয় আরবান ফ্রান্সের ক্লেরমন্ট শহরে তুর্কি মুসলিমদের বিরুদ্ধে উগ্র বক্তৃতা প্রদান করে এবং ঘোষণা করে, এই ধর্মযুদ্ধে যারা যোগদান করবে তারা সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাবে এবং যুদ্ধে মারা গেলে সরাসরি স্বর্গ লাভ করবে। ফলে হাজার হাজার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সাধারণ মানুষ ‘পবিত্র ভূমি’ উদ্ধারে ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
এইভাবে সমাজের অভ্যন্তরে সুপ্ত থাকা ধর্মীয় আবেগ, অর্থ সংকট, ক্ষমতালিপ্সা এবং সর্বোপরি পাপ থেকে মুক্তি এবং স্বর্গ প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সকল স্তরের মানুষকে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে আগ্রহী করে তোলে। আর এই আকাঙ্ক্ষার অনিবার্য ফল ১০৯৬ সালের প্রথম ধর্মযুদ্ধ বা ক্রুসেড।
----------xx---------
এই প্রশ্নটিই অন্য যেভাবে আসতে পারে :
- ক্রুসেড কী? ক্রুসেড এর পিছনে কোন কোন সামাজিক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছিল?
- ক্রুসেডের সামাজিক পটভূমি ব্যাখ্যা করো।
- কত সালে কী উদ্দেশ্যে ক্রুসেড সংঘটিত হয়? ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ সংগঠনের পিছনে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা কীভাবে কতটা ভূমিকা রেখেছিল?
- ক্রুসেড সংঘটিত হওয়ার পিছনে মধ্যযুগের ইউরোপীয় সমাজ কী ভূমিকা রেখেছিল?
এই বিষয়ে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর :
- ক্রুসেডের সামাজিক কারণ কী?
- ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ কী?
- ক্রুসেডের উদ্দেশ্য কী?
- ক্রুসেডে নারীদের অবদান কী ছিল?
- ক্রুসেডের খ্রিষ্টানদের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল?
- ক্রুসেডের ফলে পোপের ক্ষমতা কীভাবে বৃদ্ধি পায়?
- ক্রুসেড কীভাবে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন