সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইক্তা কী ? ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন

ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন আলোচনা করো।

Discuss the evolution of Iqta system, ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন
ইক্তা কী ? ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন

ইক্তা কী :

সুলতানি যুগে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা ইক্তা নামে পরিচিত ছিল। ‘ইক্তা’ শব্দের অর্থ হল ‘এক অংশ’ বা ‘এক ভাগ’। ঐতিহাসিক ড. ইরফান হাবিবের মতে, “ইসলামের বিধান অনুসারে কৃষকের উৎপন্ন ফসলের উদ্বৃত্তের একাংশ কর হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং তা প্রাদেশিক মুসলিম শাসকদের মধ্যে বন্টন করা হয়। এই প্রথাকে ইক্তা প্রথা বলা হয়।”

ইক্তা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য :

সুলতান ইলতুতমিস ভারতে ইক্তা ব্যবস্থার প্রচলন করেন। এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল মূলত :
  1. সুলতানি অধিকৃত অঞ্চলগুলির উপর কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
  2. সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটানো।
  3. সাম্রাজ্যে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা।
  4. আমির-ওমরাহদের সন্তুষ্ট করে সাম্রাজ্যে বিদ্রোহের আশঙ্কা দূর করা।
ঐতিহাসিক কে.এ. নিজামি লিখেছেন, “ভারতের সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য দিল্লির প্রথম দিকের তুর্কি সুলতানগন বিশেষ করে ইলতুৎমিস ইক্তা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন।”

ইক্তা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য :

ইক্তা ব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করলে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় :
১) ইক্তাদার :
ইক্তা ব্যবস্থা অনুযায়ী কৃষকের উৎপন্ন ফসলের উদ্বৃত্ত অংশের একাংশ রাষ্ট্রের প্রাপ্য ছিল। এই প্রাপ্য অংশ যিনি আদায় করতেন তাকে বলা হতো ইক্তাদার।
২) জমির মালিকানা :
ইক্তাদার কৃষকের কাছ থেকে ভূমি রাজস্ব ছাড়া অন্য কোন কিছুর দাবি করতে পারতেন না। কারণ, জমির মালিকানা ইক্তাদার নয়, ছিল সুলতানের হাতে। 
৩) রাজস্ব নির্ধারণ : 
ইক্তাদার রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারতেন না। এমনকি কৃষক ইচ্ছা করলে নিজে রাজদরবারে উপস্থিত হয়ে তার অবস্থা বা সমস্যার কথা জানাতে পারতেন। 
৪) ইক্তাদারের শাস্তি : 
ইক্তা ব্যবস্থার আইনকানুন লংঘন করলে সুলতান তাকে শাস্তি দিতে পারতেন এমনকি তার ইফতা বাজেয়াপ্ত করতেন।
৫) ইক্তাদারের দায়িত্ব : 
ইক্তাদারের দায়িত্ব হল রাজস্ব আদায় করা, নিজের এলাকার প্রশাসন পরিচালনা ও শান্তির শৃঙ্খলা রক্ষা করা, এবং প্রয়োজনে বিদ্রোহ দমনে সুলতানকে সেনাবাহিনী দিয়ে সাহায্য করা। 
৬) বদলির ব্যবস্থা :
সুলতান প্রয়োজন মনে করলে ইক্তাদারকে এক ইক্তা থেকে অন্য ইক্তায় বদলি করে দিতেন।
৭) ইক্তাদারের নিয়োগ :
ইকাদারের নিয়োগ পদচ্যুতি সুলতানের উপর নির্ভরশীল ছিল। সুলতানের বিরাগভাজন হলে তাকে পদচ্যুত হতে হতো।
৮) বংশানুক্রমিক নয় :
ইক্তা ব্যবস্থা বংশানুক্রমিক ছিল না। তবে পরবর্তীকালে তা বংশানুক্রমিক হয়ে পড়েছিল।

ইক্তা ব্যবস্থার বিবর্তন :

সুলতান ইলতুৎমিস ভারতে সর্বপ্রথম ইক্তা ব্যবস্থা প্রচলন করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে এই প্রথায় সংস্কার ও বিবর্তন ঘুটতে থাকে।
১) ইলতুৎমিস ও ইক্তা ব্যবস্থা :
ইলতুৎমিস এই প্রথা চালু করার পরপরই তাকে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের যন্ত্রে পরিণত করেন। তাদের বদলির ব্যবস্থা এবং সৈন্য দিয়ে সুলতানকে সাহায্য করাকে বাধ্যতামূলক করেন। 
২) বলবন ও ইক্তা ব্যবস্থা :
ইক্তাদদের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া আটকাতে বলবন 
  1. খোয়াজা নামে এক ধরনের হিসাব পরীক্ষক নিয়োগ করেন। 
  2. রাজস্ব জমা কিংবা সামরিক সাহায্য দিতে অসমাপ্ত হলে একটা ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
৩) আলাউদ্দিন খলজি ও ইফতার ব্যবস্থা :
সুলতান আলাউদ্দিন খলজী —
  1. সেনাদের ইক্তার পরিবর্তে নগদ বেতন দানের প্রথা চালু করেন। যদিও সেনাপতিদের ইত্যাদি আর রীতি চালু থাকে। 
  2. জরিপ করে ইফতার রাজস্বের হার নির্ধারণ করেন।
৪) গিয়াস উদ্দিন তুঘলক ও ইক্তা ব্যবস্থা :
গিয়াস উদ্দিন তুঘলক আলাউদ্দিন খলজির কর কাঠামোকে অপরিবর্তিত রেখে এর কঠোরতা হ্রাস করেন।
৫) বিন তুঘলক ও ইক্তা ব্যবস্থা :
পূর্বে ইক্তাদারের প্রধান দায়িত্ব ছিল দুটো। একটি রাজস্ব আদায় করা এবং অন্যটি সৈন্যদের ভরণ পোষণ করা। কিন্তু বিন তুঘলক এই দুটি দায়িত্ব দুজন ব্যক্তির উপর ন্যস্ত করেন।
৬) ফিরোজ শাহ তুঘলক ও ইফতার ব্যবস্থা :
ফিরোজ শাহ তুঘলক 
  1. ইক্তা প্রথাকে বংশানুক্রমিক করার ব্যবস্থা করেন।
  2. ইফতার হিসাব পরীক্ষায় শিথিলতা আনেন।
  3. সেনাদের বেতনের পরিবর্তে খাস জমি দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

ইক্তা ব্যবস্থার ত্রুটি :

ইক্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়।
১) ইকাদাররা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে 
২) সামন্ততন্ত্রের কুফল গুলি দূর করার পরিবর্তে একসময় সামন্ততন্ত্রের ত্রুটি বিচ্যুতি এই প্রথার মধ্যে ঢুকে পড়ে। 
৩) খাস জমি ইক্তার অন্তর্ভুক্ত করায় সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কমে যায়।
৪) ফিরোজ তুঘলকের আমলে ইক্তা বংশানুক্রমিক হওয়ার ফলে ইক্তাদদের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রবণতা বাড়ে।

ইক্তা ব্যবস্থার মূল্যায়ন :

এই সমস্ত ত্রুটি সত্ত্বেও ইক্তা ব্যবস্থার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। 
প্রথমত, ইক্তদারদের উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ করায় শহরগুলির শ্রী বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। 
দ্বিতীয়তঃ ইক্তা ব্যবস্থার ফলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে রাজ কোষের সমৃদ্ধি ঘটে। 
তৃতীয়ত, ইক্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় হয় এবং সাম্রাজ্যের ভিত্তি শক্তিশালী হয়।
চতুর্থত, অভিজাত শ্রেণির মানুষদের ইক্তা প্রদান করায় তাদের অসন্তোষ দূর হয়। সাম্রাজ্য সুস্থিতি বজায় থাকে। 
পঞ্চমত, এই ঈদটা ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে মুঘল আমলের জায়গীরদারী ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

ঐতিহাসিক কে.এ. নিজামীর মতে, সুলতানি সাম্রাজ্যের নব বিজিত এলাকাগুলো থেকে রাজস্ব আদায় করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং দূরবর্তী অঞ্চলগুলিকে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অঙ্গিভূত করা প্রভৃতি সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়েছিল ‘ইক্তা ব্যবস্থার’ মাধ্যমে। 
--------xx-------

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় প্রশ্নগুলো দেখ

নব্য প্রস্তর যুগ ও তার বৈশিষ্ট লেখো।

নব্য প্রস্তর যুগের সময়কাল উল্লেখ করো। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট লেখো। নব্য প্রস্তর যুগ : প্রাগৈতিহাসিক যুগের শেষ পর্বকে বলা হয় নব্য প্রস্তর যুগ বা Neolithic Age । এই পর্বে আদিম মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক থেকে ক্রমশঃ  খাদ্য উৎপাদক শ্রেণিতে রূপান্তরিত হয়। আনুমানিক ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 4000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ বলা হয়। নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য : ১) এই যুগের মানুষ খাদ্য উৎপাদন শুরু করে। অর্থাৎ কৃষি কাজের সূচনা হয়। ২) পশু শিকারের সাথে সাথে পশুপালনের সূচনা হয়। ৩) হাতিয়ার গুলি খুবই সূচালো, ধারালো ও ক্ষুদ্র আকারের হয়। ৪) চাকার ব্যবহার শুরু হয় ৫) প্রথম আগুন জ্বালানোর কৌশল আবিষ্কার করে  ৬) যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসতি গড়ে উঠতে থাকে। এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

জনপদ কী? প্রাচীন ভারতে জনপদ গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করো।

জনপদ কী? কীভাবে প্রাচীন ভারতে জনপদের উৎপত্তি হয়? জনপদ কী : 'জন' শব্দের অর্থ উপজাতি বা জনগোষ্ঠী। 'পদ' শব্দের অর্থ পা। চার্লস ল্যানম্যান -এর মতে, নির্দিষ্ট কোন জাতিগোষ্ঠী যখন কোন নির্দিষ্ট কোন ভৌগোলিক এলাকায় বসতি গড়ে তোলে তখন সেই ভৌগোলিক এলাকাকে  'জনপদ' বলে। কৌটিল্য জনপদ বলতে  নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও জনসমষ্টিকে বুঝিয়েছেন। এই জনপদে একদিকে থাকবে বিচক্ষণ উচ্চবর্ণের মানুষ বা প্রভু। অন্যদিকে থাকবে - ১) পর্যাপ্ত পরিমাণ উর্বর জমি এবং ২) সেই ভূখন্ডে থাকবে প্রচুর পরিশ্রমী কৃষক যাদের কর প্রদানের চাপ ও শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা থাকবে।  জনপদ গড়ে ওঠার কারণ (পটভূমি) : আর্যদের আগমন : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে আর্যরা ভারতে প্রবেশ করে। এর ছিল যাযাবর প্রকৃতির । কারণ, পশু খাদ্যের সন্ধানে তারা বসবাসের জায়গা পরিবর্তন করত। তবে তারা গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন যাপন করত। তাই এদের 'জন' (জনগোষ্ঠী বা উপজাতি) বলা হত।  জনসংখ্যা বৃদ্ধি : সপ্ত সিন্ধু এলাকায় উর্বর ভূমির কল্যাণে আর্যদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রবণতা বাড়ে। ফলে নির্দিষ্ট এলাকায় জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। ক্রমশ তারা অর্ধ-যাযাবর জীবনে ...

মধ্যপ্রস্তর যুগ বলতে কোন সময়কালকে বোঝানো হয়? এই যুগের বৈশিষ্ট্য লেখো

'মধ্যপ্রস্তর যুগ' ও তার বৈশিষ্ট্য প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ পর্ব ( ১৫ হাজার বছর আগে ) থেকে হোলোসিন যুগের সূচনা পর্ব ( ১০ হাজার বছর ) পর্যন্ত সময়কালকে মধ্যপ্রস্তর যুগ বলে। অন্যভাবে বলা বলা যায়, খাদ্য সংগ্রহকারী প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং খাদ্য উৎপাদনকারী নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কালকে 'মধ্য প্রস্তর যুগ' বলা হয়। মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য ঃ ১) সময়কাল : মধ্য প্রস্তর যুগ খ্রিষ্টপুর্ব ১৫ হাজার বছর থেকে ১০ হাজার বছর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ২) হাতিয়ার :  এই যুগের ( মধ্য প্রস্তর যুগ ) হাতিয়ারগুলি প্রাচীন প্রস্তর যুগের চেয়ে উন্নত ও আকারে ছোটো ছিল। পাথর ছাড়া জীবজন্তুর হাড়, দাঁত ইত্যাদিও হাতিয়ার তৈরিতে ব্যবহার করা হত। ৩) জীবিকা ও জীবনযাপন : মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল পশু শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ। এবং জীবনযাত্রা ছিল অর্ধ যাযাবর প্রকৃতির। ৪) কৃষিকাজ : যুগের শেষ পর্বে মানুষ কৃষিকাজের সূচনা করে। ৫) পোষাক :  মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ প্রাচীন প্রস্তর যুগের মত গাছের ছাল ও পশুর চামড়া দিয়ে পোশাক বানাত। তবে এই পোশাক আগের চেয়ে উন্নতমানের ছিল। ৬) যানবাহন : এই ...

প্রাক-ঐতিহাসিক (প্রাগৈতিহাসিক) যুগ কাকে বলে ?

  প্রাক-ঐতিহাসিক যুগ মানব সভ্যতার সূচনা হয় আজ থেকে ৩৬ লক্ষ্য বছর আগে। এই সময় থেকে লিপির ব্যবহার শুরু হওয়ার মধ্যবর্তী সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়। এই সময়ের ইতিহাস রচনার কোন লিখিত উপাদান পাওয়া যায় না। ফলে শুধুমাত্র প্রত্নতাত্বিক উপাদানের ওপর ভিত্তি করেই ইতিহাস লেখা হয়। তবে সব দেশে একই সময়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনা হয়নি।  -----🙏---- বিকল্প প্রশ্ন : ১) প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলতে কী বোঝো? আরও পড়ো : ১)   প্রাগৈতিহাসিক যুগের বৈশিষ্ট্য কী ছিলো ?                     ২) প্রাগৈতিহাসিক যুগকে কয়ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ? এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি বর্ননা করো।

প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি Describe-the-reasons-or-background-for-the-development-of-city-states-in-ancient-Greece পলিস শব্দের অর্থ ' নগররাষ্ট্র '। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শতকে মধ্যবর্তী সময়ে গ্রিসে প্রায় ১৫০০ টি ছোট ছোট রাষ্ট্র বা সিটি স্টেট গড়ে ওঠে। এগুলির যাবতীয় কাজকর্মে নাগরিকরাই প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্ৰহণ করত। এই ছোট রাষ্ট্রগুলো পলিস বা নগর-রাষ্ট্র নামে পরিচিত। যেমন - এথেন্স, স্পার্টা ইত্যাদি। নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সামনে আসে।  ১) বৈদেশিক আক্রমণ ও  অক্টোপলিস  : আনুমানিক ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে গ্রীকরা বৈদেশিক আক্রমণের ভয়ে গ্রিসের বিভিন্ন পাহাড়ের শিখরে শক্তিশালী কেন্দ্র গড়ে তোলে। এগুলো 'অক্টোপলিস' নামে পরিচিত। এই অক্টোপলিসকে কেন্দ্র করে ক্রমশ নগর গড়ে ওঠে এবং এই নগরকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে নগররাষ্ট্র বা পলিস গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।  ২) স্থানীয় বাজার : আস্তে আস্তে এই  'অক্টোপলিস'গুলোর কাছেই স্থানীয় বাজার গড়ে উঠতে থাকে।...

মহাজনপদ কী? মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো।

মহাজনপদ কী? মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো। মহাজনপদ ও মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য  What is Mahajanapada? Briefly write the characteristics of Mahajanapada. মহাজনপদ কী : 'মহা' অর্থ বৃহৎ। 'জনপদ' কথার অর্থ 'নির্দিষ্ট ভূখণ্ডসহ জনসমষ্টি। অর্থাৎ  ক্ষুদ্র রাজ্য। খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের আগে ভারতে উপজাতি গোষ্ঠীভিত্তিক ছোট ছোট জনপদ গড়ে উঠেছিল। এই জনপদ গুলি পরস্পরের ভূখণ্ড দখল করার তাগিদে নিজেদের মধ্যে সব সময় সংঘর্ষে লিপ্ত থাকতো। এই সংঘর্ষে জয় পরাজয়ের সূত্র ধরেই উত্তর ভারতে একাধিক জনপদ সংযুক্ত হয়ে যেত। ফলে বৃহৎ জনপদ বা রাজ্যের জন্ম হয়। এই ধরনের বৃহৎ জনপদ বা রাজ্যগুলি ' মহাজনপদ' নামে পরিচিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর তিনটি উল্লেখযোগ্য মহাজনপদের নাম হলো মগধ (রাজতান্ত্রিক), বৃজি ও মল্ল (প্রজাতান্ত্রিক)। মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য : এই মহাজনপদগুলির ভৌগোলিক অবস্থান ও রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।           ১) উত্তর ভারত কেন্দ্রিক অবস্থান :   ডক্টর হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী মতে, মহাজনপদ গুলির অধিকাংশের অবস্থ...

প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থান

 প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থানের ওপর একটি প্রবন্ধ রচনা করো। সমাজে নারীর অবস্থান : প্রাচীনকালে গ্রীস ও রোমের মত ভারতীয় নারীরাও সমাজে বিশিষ্ট স্থান অধিকার লাভ করেছিল। তবে তা মূলত উচ্চশ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।  ঋগবৈদিক যুগে নারীর অবস্থান :  নারীর গুরুত্ব : পুত্র সন্তান কাম্য হলেও নারীরা মেটেও অবহেলিত ছিল না।  নারী শিক্ষা : নারীরা যথেষ্ট শিক্ষার সুযোগ লাভ করেছিল। এ যুগের উল্লেখযোগ্য বিদুষী নারী ছিলেন - লোপমুদ্রা, ঘোষা, অপলা মমতা প্রমুখ। বেদ পাঠের অধিকার : এই সময় নারীদের বেদ পাঠের অধিকার ছিল বলেও জানা যায়। এমনকী বেদের স্তোত্র রচনায় অংশ নিয়েছিল বলে জানা যায়।  পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থান : নারীর গুরুত্ব হ্রাস : এই সময় নারী বেদ পাঠের অধিকার হারায়।  নারী শিক্ষা উপেক্ষিত : তৈত্তিরীয় সংহিতায় নারী শিক্ষার প্রয়োজন নেই বলে জানান হয়। ফলে নারী শিক্ষা ব্যাহত হয়। তা সত্ত্বেও এ সময় কোন কোন নারী উচ্চশিক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। যেমন, গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রমুখ।  প্রতিবাদী আন্দোলনের যুগে নারীর অবস্থান : নারী শিক্ষা : বৌদ্ধ গ্রন্থ বিনয়পিটক থেকে জানা...

প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

প্রাচীন, মধ্য ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে পার্থক্য বাংলা 👉 English অথবা,  প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে তুলনা করো।

ঐতিহাসিক যুগ কাকে বলে? এর বৈশিষ্ঠগুলো উল্লেখ করো। উদাহরণ দাও।

ঐতিহাসিক যুগ কাকে বলে? এর বৈশিষ্ঠগুলো উল্লেখ করো। উদাহরণ দাও।  ঐতিহাসিক যুগ বলতে সেই সময়কালকে বোঝায়, যখন ১) মানুষ লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, ২) তাদের জীবনযাপন প্রণালী, সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিবররণ রেখে গেছেন, এবং সেই সব বিবরণের পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়ছে।  উদাহরণ হিসাবে মিশরিয় ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতার কথা বলা যায়।   খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে মিশরে এবং  খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে ভারতে, (আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময়) এই যুগের সূচনা ধরা হয় । ঐতিহাসিক যুগের বৈশিষ্ট্য : ১) এই যুগে মানুষের লিপিজ্ঞান ছিল।  ২) এই লিপির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়েছে, ৩) এই যুগের সময়কাল পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সূচনা হয়েছে।  এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

প্রাচীন প্রস্তর বলতে কী বোঝ? প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল উল্লেখ করো। এই যুগের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলতে কী বোঝ? প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ ভাগে (৫০ হাজার - ১৫ হাজার আগে) পৃথিবীতে প্রায়-মানুষেরা ( হোমো ইরেক্টাস)  পাথরকে আকারগত পরিবর্তন না করেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত। তাই তাদের হাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ ও বৃত্তাকার। এই ধরণের অস্ত্র ব্যবহারকারী মানুষের সময়কালকে (যুগকে) 'প্রাচীন প্রস্তর যুগ' বলা হয়। প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল : প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় প্রায় ১৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন প্রস্তর  যুগের বৈশিষ্ট্য ঃ প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় প্রায় ১৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই যুগের মানুষ বিভিন্ন ধরণের পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহার করত। এই পর্বের মানুষ পাথরকে আকারগত পরিবর্তন না করেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত। তাই তাদের হাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ ও বৃত্তাকার। এই যুগের শেষ দিকে মানুষ তীরধনুক আবিষ্কার করে। এই পর্বের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত পশু শিকার, ফলমূল সংগ্রহ এবং মাছ ধরে। এই সময় মানুষ আগুনের ব্যবহার জানত না। তাই তারা কাঁচা মাংস খেত। মানুষ ছোট ছোট গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করত। অর্থাৎ তাদের ...