সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রুশোর রাষ্ট্রদর্শন ও তার মূল্যায়ন

রুশোর রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করো।

Rousseau's political philosophy and its evaluation
রুশোর রাষ্ট্রদর্শন ও তার মূল্যায়ন
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জগতে এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব হলেন ফরাসি চিন্তাবিদ ও দার্শনিক জ্যাঁ জ্যাঁক রুশো। তাঁর রাষ্ট্রদর্শন পরবর্তীকালে ইউরোপের জ্ঞানদীপ্তির যুগ এবং বিশেষত ফরাসি বিপ্লবকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।

রুশোর রাষ্ট্রদর্শনের উৎস :

প্লেটোর প্রভাব :

রুশোর রাষ্ট্রচিন্তার ওপর প্লেটোর চিন্তাধারার গভীর প্রভাব পড়েছিল। প্লেটোর রাজনৈতিক আনুগত্য, যা আইন ও শক্তির উৎস হিসাবে বিবেচিত এবং লোকসমাজ, যা নৈতিক মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে। রুশো প্লেটোর এই মৌলিক চিন্তাধারার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বলেছিলেন, "সমাজ ছাড়া ব্যক্তির পক্ষে কোনও ক্ষমতা অর্জন সম্ভব নয়।"

লকের প্রভাব :

অন্যদিকে জন লকের স্বাভাবিক অধিকার, সম্মতির তত্ত্ব, লোকসমাজের সর্বভৌমিকতা প্রভৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ল্যাস্কির মতে, "রুশোর শিক্ষাটি লকের খনন করা চ্যানেলের একটি বিস্তৃত সমাপ্তি মাত্র।" ("Rousseau's teaching is only a broad endingof the channel dug by Locke.") তবে, মনে রাখতে হবে, লকের তত্ত্বের বেশ কিছু ত্রুটি সংশোধন করে তিনি তাঁর তত্ত্বে গ্রহণ করেছিলেন।

মন্তেস্কুর প্রভাব :

এছাড়া, রাষ্ট্রচিন্তাবিদ মন্তেস্কুর সাংবিধানিকতার তত্ত্বও তিনি তাঁর তত্ত্বে গ্রহণ করেছিলেন।

রুশোর রাষ্ট্রতত্ত্ব ও তার বৈশিষ্ট্য :

রুশো তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট, ডিসকোর্স অন দ্য ওরিজিন অফ ইনইকুয়ালিটি, ডিসকোর্স অন দ্য মোরাল এফেক্ট অফ আর্টস এন্ড সাইন্স ইত্যাদি গ্রন্থে। এগুলো থেকে আমরা তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার কিছু বৈশিষ্ঠ্য খুঁজে পাই :
  1. প্রকৃতির রাজ্য : রুশোর মতে প্রকৃতির রাজ্য হল ভূস্বর্গের মতো, যেখানে মানুষে মানুষে কোন অশান্তি বা বিদ্বেষ নেই; আছে মধুর ও আন্তরিক সম্পর্ক, আছে সুখ ও শান্তি। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে চিন্তা ও বিচার শক্তির উন্মেষ ঘটলে পারস্পরিক ভেদাভেদ সৃষ্টি হয় এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভব ঘটে। এর ফলে প্রকৃতির রাজ্যে সুখ ও শান্তি বিনষ্ট হয়। 
  2. সামাজিক চুক্তি : প্রকৃতির রাজ্যে সৃষ্টি হওয়া এই অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে জনগণ নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদন করে। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে রাজনৈতিক ব্যবস্থা। রুশো এই চুক্তির নাম দিয়েছেন ‘সামাজিক চুক্তি’ বা সোশ্যাল কনট্রাক্ট। এই চুক্তির হাত ধরে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রস্তুত হয়।
  3. স্বাধীনতা জন্মগত : রুশো তাঁর ‘Discourse on the origin of inequality’ গ্রন্থে বলেছেন, মানুষ সমান অধিকার নিয়ে জন্মায় এবং সমাজ ব্যবস্থা তাকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ‘সোশ্যাল কন্টাক্ট’ গ্রন্থে তিনি তাঁর এই মত আরও স্পষ্ট করে লেখেন, “মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায় এবং সমাজের সর্বত্র সে শৃঙ্খলে আবদ্ধ।”
  4. সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব : রুশোর সামাজিক চুক্তি মতবাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ‘সাধারণ ইচ্ছাতত্ত্ব’ বা ‘General will’ । রুশোর মতে, সাধারণ জনগণের ইচ্ছাই হল প্রকৃত শক্তি। তিনি জনগণের এই ইচ্ছাকে দু'ভাগে ভাগ করেছেন ‘প্রকৃত ইচ্ছা’ এবং ‘বাস্তব ইচ্ছা’ ব্যক্তি ইচ্ছা। প্রকৃত ইচ্ছা হল মানুষের মৌলিক, বিশুদ্ধ ও স্বভাবগত ইচ্ছা যা আসলে সকল মানুষের মঙ্গল করার ইচ্ছা। রুশো বলছেন, সাধারণ ইচ্ছা হল জনগণের এই সব প্রকৃত ইচ্ছাগুলির গুণফল।
  5. সার্বভৌমিকতার তত্ত্ব : রুশোর ব্যাখ্যায়, এই সাধারণ ইচ্ছাই হল সার্বভৌম ক্ষমতা। কোন ব্যক্তি বা সরকার এই ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে না। তাঁর মতে, এই ক্ষমতা হল অহস্তান্তরযোগ্য, সমষ্টিগত স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত, অবিভাজ্য, চরম ও চূড়ান্ত এবং অবশ্যই অভ্রান্ত।
  6. আইন ও আইন প্রণেতা : সর্বসাধারণের এই ইচ্ছাকেই রুশো আইন বলে অভিহিত করেছেন। এবং বলেছেন, যে প্রজারা আইনের আনুগত্য মেনে নেয়, কেবলমাত্র তাদেরই আইন প্রণেতা হওয়া উচিত। 
  7. শাসনব্যবস্থা বা সরকার : রুশোর মতে, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দুটি পৃথক ক্ষমতার অস্তিত্ব রয়েছে। একটি আইন প্রণয়নকারী ক্ষমতা যা সার্বভৌম এবং অন্যটি শাসন বিভাগীয় ক্ষমতা। শাসন বিভাগ বা সরকারের দায়িত্ব হল শাসক ও প্রজার মধ্যে যোগসূত্র রক্ষা করা। এই সরকারকে তিনি তিন শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন : গণতান্ত্রিক, অভিজাততান্ত্রিক এবং রাজতান্ত্রিক। সেই সঙ্গে তিনি বৃহদায়কার রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে রাজতন্ত্রকেই সবচেয়ে উপযুক্ত শাসনব্যবস্থা বলে চিহ্নিত করেছেন।

রুশোর রাষ্ট্রতত্ত্বের মূল্যায়ন :

রুশো রাজতন্ত্রকে সবচেয়ে উপযুক্ত শাসন ব্যবস্থা বললেও রাজার স্বৈরাচারী শাসনের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজা যদি স্বৈরাচারী হয়, সামাজিক চুক্তি অনুযায়ী, প্রজাদের অধিকার আছে রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করার। কারণ, এই চুক্তি অনুযায়ী জনগণের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধানের বিনিময়ে রাজা শাসন ক্ষমতা লাভ করেন। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তিনি শাসক হওয়ার যোগ্যতা হারান।

এভাবে রুশো জনগণের ইচ্ছাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আধুনিক জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম করেছিলেন। এ কারণে অধ্যাপক হার্নস রুশোর রাষ্ট্রচিন্তার প্রশংসা করে বলেছেন, “রাজনৈতিক আদর্শবাদীদের মধ্যে রুশো উচ্চস্থানের অধিকারী।”
--------xx-------

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় প্রশ্নগুলো দেখ

নব্য প্রস্তর যুগ ও তার বৈশিষ্ট লেখো।

নব্য প্রস্তর যুগের সময়কাল উল্লেখ করো। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট লেখো। নব্য প্রস্তর যুগ : প্রাগৈতিহাসিক যুগের শেষ পর্বকে বলা হয় নব্য প্রস্তর যুগ বা Neolithic Age । এই পর্বে আদিম মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক থেকে ক্রমশঃ  খাদ্য উৎপাদক শ্রেণিতে রূপান্তরিত হয়। আনুমানিক ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 4000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ বলা হয়। নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য : ১) এই যুগের মানুষ খাদ্য উৎপাদন শুরু করে। অর্থাৎ কৃষি কাজের সূচনা হয়। ২) পশু শিকারের সাথে সাথে পশুপালনের সূচনা হয়। ৩) হাতিয়ার গুলি খুবই সূচালো, ধারালো ও ক্ষুদ্র আকারের হয়। ৪) চাকার ব্যবহার শুরু হয় ৫) প্রথম আগুন জ্বালানোর কৌশল আবিষ্কার করে  ৬) যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসতি গড়ে উঠতে থাকে। এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

জনপদ কী? প্রাচীন ভারতে জনপদ গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করো।

জনপদ কী? কীভাবে প্রাচীন ভারতে জনপদের উৎপত্তি হয়? জনপদ কী : 'জন' শব্দের অর্থ উপজাতি বা জনগোষ্ঠী। 'পদ' শব্দের অর্থ পা। চার্লস ল্যানম্যান -এর মতে, নির্দিষ্ট কোন জাতিগোষ্ঠী যখন কোন নির্দিষ্ট কোন ভৌগোলিক এলাকায় বসতি গড়ে তোলে তখন সেই ভৌগোলিক এলাকাকে  'জনপদ' বলে। কৌটিল্য জনপদ বলতে  নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও জনসমষ্টিকে বুঝিয়েছেন। এই জনপদে একদিকে থাকবে বিচক্ষণ উচ্চবর্ণের মানুষ বা প্রভু। অন্যদিকে থাকবে - ১) পর্যাপ্ত পরিমাণ উর্বর জমি এবং ২) সেই ভূখন্ডে থাকবে প্রচুর পরিশ্রমী কৃষক যাদের কর প্রদানের চাপ ও শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা থাকবে।  জনপদ গড়ে ওঠার কারণ (পটভূমি) : আর্যদের আগমন : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে আর্যরা ভারতে প্রবেশ করে। এর ছিল যাযাবর প্রকৃতির । কারণ, পশু খাদ্যের সন্ধানে তারা বসবাসের জায়গা পরিবর্তন করত। তবে তারা গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন যাপন করত। তাই এদের 'জন' (জনগোষ্ঠী বা উপজাতি) বলা হত।  জনসংখ্যা বৃদ্ধি : সপ্ত সিন্ধু এলাকায় উর্বর ভূমির কল্যাণে আর্যদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রবণতা বাড়ে। ফলে নির্দিষ্ট এলাকায় জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। ক্রমশ তারা অর্ধ-যাযাবর জীবনে ...

মধ্যপ্রস্তর যুগ বলতে কোন সময়কালকে বোঝানো হয়? এই যুগের বৈশিষ্ট্য লেখো

'মধ্যপ্রস্তর যুগ' ও তার বৈশিষ্ট্য প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ পর্ব ( ১৫ হাজার বছর আগে ) থেকে হোলোসিন যুগের সূচনা পর্ব ( ১০ হাজার বছর ) পর্যন্ত সময়কালকে মধ্যপ্রস্তর যুগ বলে। অন্যভাবে বলা বলা যায়, খাদ্য সংগ্রহকারী প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং খাদ্য উৎপাদনকারী নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কালকে 'মধ্য প্রস্তর যুগ' বলা হয়। মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য ঃ ১) সময়কাল : মধ্য প্রস্তর যুগ খ্রিষ্টপুর্ব ১৫ হাজার বছর থেকে ১০ হাজার বছর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ২) হাতিয়ার :  এই যুগের ( মধ্য প্রস্তর যুগ ) হাতিয়ারগুলি প্রাচীন প্রস্তর যুগের চেয়ে উন্নত ও আকারে ছোটো ছিল। পাথর ছাড়া জীবজন্তুর হাড়, দাঁত ইত্যাদিও হাতিয়ার তৈরিতে ব্যবহার করা হত। ৩) জীবিকা ও জীবনযাপন : মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল পশু শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ। এবং জীবনযাত্রা ছিল অর্ধ যাযাবর প্রকৃতির। ৪) কৃষিকাজ : যুগের শেষ পর্বে মানুষ কৃষিকাজের সূচনা করে। ৫) পোষাক :  মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ প্রাচীন প্রস্তর যুগের মত গাছের ছাল ও পশুর চামড়া দিয়ে পোশাক বানাত। তবে এই পোশাক আগের চেয়ে উন্নতমানের ছিল। ৬) যানবাহন : এই ...

প্রাক-ঐতিহাসিক (প্রাগৈতিহাসিক) যুগ কাকে বলে ?

  প্রাক-ঐতিহাসিক যুগ মানব সভ্যতার সূচনা হয় আজ থেকে ৩৬ লক্ষ্য বছর আগে। এই সময় থেকে লিপির ব্যবহার শুরু হওয়ার মধ্যবর্তী সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়। এই সময়ের ইতিহাস রচনার কোন লিখিত উপাদান পাওয়া যায় না। ফলে শুধুমাত্র প্রত্নতাত্বিক উপাদানের ওপর ভিত্তি করেই ইতিহাস লেখা হয়। তবে সব দেশে একই সময়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনা হয়নি।  -----🙏---- বিকল্প প্রশ্ন : ১) প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলতে কী বোঝো? আরও পড়ো : ১)   প্রাগৈতিহাসিক যুগের বৈশিষ্ট্য কী ছিলো ?                     ২) প্রাগৈতিহাসিক যুগকে কয়ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ? এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি বর্ননা করো।

প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি Describe-the-reasons-or-background-for-the-development-of-city-states-in-ancient-Greece পলিস শব্দের অর্থ ' নগররাষ্ট্র '। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শতকে মধ্যবর্তী সময়ে গ্রিসে প্রায় ১৫০০ টি ছোট ছোট রাষ্ট্র বা সিটি স্টেট গড়ে ওঠে। এগুলির যাবতীয় কাজকর্মে নাগরিকরাই প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্ৰহণ করত। এই ছোট রাষ্ট্রগুলো পলিস বা নগর-রাষ্ট্র নামে পরিচিত। যেমন - এথেন্স, স্পার্টা ইত্যাদি। নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সামনে আসে।  ১) বৈদেশিক আক্রমণ ও  অক্টোপলিস  : আনুমানিক ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে গ্রীকরা বৈদেশিক আক্রমণের ভয়ে গ্রিসের বিভিন্ন পাহাড়ের শিখরে শক্তিশালী কেন্দ্র গড়ে তোলে। এগুলো 'অক্টোপলিস' নামে পরিচিত। এই অক্টোপলিসকে কেন্দ্র করে ক্রমশ নগর গড়ে ওঠে এবং এই নগরকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে নগররাষ্ট্র বা পলিস গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।  ২) স্থানীয় বাজার : আস্তে আস্তে এই  'অক্টোপলিস'গুলোর কাছেই স্থানীয় বাজার গড়ে উঠতে থাকে।...

মহাজনপদ কী? মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো।

মহাজনপদ কী? মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো। মহাজনপদ ও মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য  What is Mahajanapada? Briefly write the characteristics of Mahajanapada. মহাজনপদ কী : 'মহা' অর্থ বৃহৎ। 'জনপদ' কথার অর্থ 'নির্দিষ্ট ভূখণ্ডসহ জনসমষ্টি। অর্থাৎ  ক্ষুদ্র রাজ্য। খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের আগে ভারতে উপজাতি গোষ্ঠীভিত্তিক ছোট ছোট জনপদ গড়ে উঠেছিল। এই জনপদ গুলি পরস্পরের ভূখণ্ড দখল করার তাগিদে নিজেদের মধ্যে সব সময় সংঘর্ষে লিপ্ত থাকতো। এই সংঘর্ষে জয় পরাজয়ের সূত্র ধরেই উত্তর ভারতে একাধিক জনপদ সংযুক্ত হয়ে যেত। ফলে বৃহৎ জনপদ বা রাজ্যের জন্ম হয়। এই ধরনের বৃহৎ জনপদ বা রাজ্যগুলি ' মহাজনপদ' নামে পরিচিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর তিনটি উল্লেখযোগ্য মহাজনপদের নাম হলো মগধ (রাজতান্ত্রিক), বৃজি ও মল্ল (প্রজাতান্ত্রিক)। মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য : এই মহাজনপদগুলির ভৌগোলিক অবস্থান ও রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।           ১) উত্তর ভারত কেন্দ্রিক অবস্থান :   ডক্টর হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী মতে, মহাজনপদ গুলির অধিকাংশের অবস্থ...

প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থান

 প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থানের ওপর একটি প্রবন্ধ রচনা করো। সমাজে নারীর অবস্থান : প্রাচীনকালে গ্রীস ও রোমের মত ভারতীয় নারীরাও সমাজে বিশিষ্ট স্থান অধিকার লাভ করেছিল। তবে তা মূলত উচ্চশ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।  ঋগবৈদিক যুগে নারীর অবস্থান :  নারীর গুরুত্ব : পুত্র সন্তান কাম্য হলেও নারীরা মেটেও অবহেলিত ছিল না।  নারী শিক্ষা : নারীরা যথেষ্ট শিক্ষার সুযোগ লাভ করেছিল। এ যুগের উল্লেখযোগ্য বিদুষী নারী ছিলেন - লোপমুদ্রা, ঘোষা, অপলা মমতা প্রমুখ। বেদ পাঠের অধিকার : এই সময় নারীদের বেদ পাঠের অধিকার ছিল বলেও জানা যায়। এমনকী বেদের স্তোত্র রচনায় অংশ নিয়েছিল বলে জানা যায়।  পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থান : নারীর গুরুত্ব হ্রাস : এই সময় নারী বেদ পাঠের অধিকার হারায়।  নারী শিক্ষা উপেক্ষিত : তৈত্তিরীয় সংহিতায় নারী শিক্ষার প্রয়োজন নেই বলে জানান হয়। ফলে নারী শিক্ষা ব্যাহত হয়। তা সত্ত্বেও এ সময় কোন কোন নারী উচ্চশিক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। যেমন, গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রমুখ।  প্রতিবাদী আন্দোলনের যুগে নারীর অবস্থান : নারী শিক্ষা : বৌদ্ধ গ্রন্থ বিনয়পিটক থেকে জানা...

প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

প্রাচীন, মধ্য ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে পার্থক্য বাংলা 👉 English অথবা,  প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে তুলনা করো।

ঐতিহাসিক যুগ কাকে বলে? এর বৈশিষ্ঠগুলো উল্লেখ করো। উদাহরণ দাও।

ঐতিহাসিক যুগ কাকে বলে? এর বৈশিষ্ঠগুলো উল্লেখ করো। উদাহরণ দাও।  ঐতিহাসিক যুগ বলতে সেই সময়কালকে বোঝায়, যখন ১) মানুষ লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, ২) তাদের জীবনযাপন প্রণালী, সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিবররণ রেখে গেছেন, এবং সেই সব বিবরণের পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়ছে।  উদাহরণ হিসাবে মিশরিয় ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতার কথা বলা যায়।   খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে মিশরে এবং  খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে ভারতে, (আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময়) এই যুগের সূচনা ধরা হয় । ঐতিহাসিক যুগের বৈশিষ্ট্য : ১) এই যুগে মানুষের লিপিজ্ঞান ছিল।  ২) এই লিপির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়েছে, ৩) এই যুগের সময়কাল পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সূচনা হয়েছে।  এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

প্রাচীন প্রস্তর বলতে কী বোঝ? প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল উল্লেখ করো। এই যুগের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলতে কী বোঝ? প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ ভাগে (৫০ হাজার - ১৫ হাজার আগে) পৃথিবীতে প্রায়-মানুষেরা ( হোমো ইরেক্টাস)  পাথরকে আকারগত পরিবর্তন না করেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত। তাই তাদের হাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ ও বৃত্তাকার। এই ধরণের অস্ত্র ব্যবহারকারী মানুষের সময়কালকে (যুগকে) 'প্রাচীন প্রস্তর যুগ' বলা হয়। প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল : প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় প্রায় ১৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন প্রস্তর  যুগের বৈশিষ্ট্য ঃ প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় প্রায় ১৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই যুগের মানুষ বিভিন্ন ধরণের পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহার করত। এই পর্বের মানুষ পাথরকে আকারগত পরিবর্তন না করেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত। তাই তাদের হাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ ও বৃত্তাকার। এই যুগের শেষ দিকে মানুষ তীরধনুক আবিষ্কার করে। এই পর্বের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত পশু শিকার, ফলমূল সংগ্রহ এবং মাছ ধরে। এই সময় মানুষ আগুনের ব্যবহার জানত না। তাই তারা কাঁচা মাংস খেত। মানুষ ছোট ছোট গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করত। অর্থাৎ তাদের ...