সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভৌগোলিক আবিষ্কারের কারণ

ভৌগোলিক আবিষ্কারের কারণগুলো আলোচনা করো।

Reasons for geographical discoveries, ভৌগোলিক আবিষ্কারের কারণ,
ভৌগোলিক আবিষ্কারের কারণ

ভৌগোলিক আবিষ্কার :

পঞ্চদশ শতকের ইউরোপে নবজাগরণ, বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ও নৌপ্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির ফলে ইউরোপীয়দের মধ্যে অজানাকে জানা এবং অচেনাকে চেনার অদম্য ইচ্ছা জেগে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মানুষ সামুদ্রিক অভিযানে অংশ নেয়। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নতুন নতুন ভূখণ্ড বা দেশ আবিষ্কার হতে থাকে। নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কারের এই ঘটনা ‘ভৌগোলিক আবিষ্কার’ নামে পরিচিত।

এইভাবে  সমগ্র পঞ্চদশ শতক জুড়ে ইউরোপীয়রা একের পর এক নৌ-অভিযানের মাধ্যমে পৃথিবীর নতুন নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কার করে। আর এই কারণে পঞ্চদশ শতকে ‘ভৌগোলিক আবিষ্কারের যুগ’ বলা হয়।

ভৌগোলিক আবিষ্কারের কারণ বা পটভূমি :

খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতক থেকে ইউরোপীয় দেশগুলি যে দুঃসাহসিক ভৌগোলিক অভিযান শুরু করে তার পিছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ লক্ষ্য করা যায়।
  1. কৃষি ও শিল্পবিপ্লব : পঞ্চদশ শতকে নবজাগরণের প্রভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটে। নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির জন্ম হয়। এইসব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ‘কৃষি ও শিল্প উৎপাদন ক্ষেত্রে বিপ্লব’ সংঘটিত হয়। ফলে শিল্পপণ্য উদ্বৃত্ত হতে শুরু করে। এই উদ্বৃত্ত শিল্প পণ্য বিক্রি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির প্রয়োজনে নতুন নতুন বাজার আবিষ্কার ও দখল জরুরী হয়ে পড়ে।
  2. কনস্টান্টিনোপলের পতন : ১৪৫৩ সালে তুর্কিদের হাতে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য তথা কনস্টান্টিনোপলের পতন ঘটে। ফলে ভূমধ্যসাগরের জলপথ ও স্থলপথ, দুই-ই ইউরোপীয় বণিকদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে প্রাচ্যের দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ পুনরায় গড়ে তোলার জন্য নতুন পথের সন্ধান জরুরী হয়ে পড়ে।
  3. ভ্রমণ কাহিনী : মধ্যযুগের শেষ দিকে অনেক ইউরোপীয় ভ্রমণকারী চিন ও প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে সেখানকার কথা ইউরোপীয়দের কাছে তুলে ধরেন। ফলে এইসব দেশগুলির প্রতি তাদের আগ্রহ ও কৌতুহল বৃদ্ধি পায়। এই আগ্রহ ও কৌতূহল তাদের দুঃসাহসিক সামুদ্রিক অভিযানে যেতে উদ্বুদ্ধ করে।
  4. বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের আবিষ্কার : নবজাগরণের ফলে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার প্রসার ঘটে। ফলে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হতে থাকে।  কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও প্রমুখ বৈজ্ঞানিকের আবিষ্কারের সূত্র ধরে  নৌ-কম্পাস, অ্যাস্ট্রোলেব ইত্যাদি যন্ত্র আবিষ্কার হয়। ফলে ভৌগোলিক অভিযান সহজ হয়ে ওঠে।
  5. মানচিত্র অংকন : পঞ্চদশ শতকে আঁদ্রেওয়াল পারজার বিশ্ব মানচিত্র এবং ষোড়শ শতকে গারহার্ডাস মারকেটার ইউরোপের প্রথম আধুনিক মানচিত্র তৈরি করেন। এই মানচিত্র সামুদ্রিক অভিযানকে সহজসাধ্য করে তোলে। 
  6. শাসকগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা : ভৌগোলিক আবিষ্কারে অগ্রসর হতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাজারা সে দেশের নাবিকদের উৎসাহ, প্রেরণা ও সাহায্য করতেন। এক্ষেত্রে পর্তুগালের রাজা দ্বিতীয় জন, স্পেনের রাজা ফার্দিনান্দ ও রানী ইসাবেলার পৃষ্ঠপোষকতায় সামুদ্রিক অভিযান উৎসাহিত হয়।
  7. চার্চের উৎসাহদান : ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা নাবিকদের সমুদ্র অভিযানে উৎসাহ দিতে শুরু করে। নতুন আবিষ্কৃত দেশগুলিতে খ্রিস্টানধর্মের প্রচার করাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল।
  8. জনসংখ্যা হ্রাস : চতুর্দশ শতকে ইউরোপে প্লেগের প্রাদুর্ভাব হলে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। ফলে, কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে সামুদ্রিক অভিযানের মাধ্যমে নতুন নতুন দেশ আবিষ্কার ও সেখানকার মানুষকে দাস মজুর হিসাবে আমদানি করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়।
  9. পর্তুগালের ভূমিকা : পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে পর্তুগালে একদিকে যেমন রাজনৈতিক সুস্থিতি ও শান্তি বজায় ছিল, তেমনি সে সময় সেখানে সোনার যোগান কমে যায়। এই রাজনৈতিক সুস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে পর্তুগাল সোনার যোগান বাড়াতে উদ্যোগ নেন। আর এই জন্যেই তিনি নাবিকদের ভৌগোলিক অভিযানে উৎসাহিত করেন।
  10. নাবিকদের দুঃসাহসিক মানসিকতা : পঞ্চদশ শতকের ইউরোপে বহু দুঃসাহসী নাবিক জন্মগ্রহণ করেন।  তারা নিজেদের ব্যক্তিগত বীরত্ব ও জাতীয় গৌরব বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার মত দুঃসাহসী কাজে আত্মনিয়োগ করত।

উপসংহার :

বস্তুত, সমকালীন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, বাণিজ্যের বিকাশ, প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতি, নৌ-বিদ্যার অগ্রগতি, ধর্মীয় অনুপ্রেরণা,দুঃসাহসী নাবিকদের অদম্য ইচ্ছা ভৌগোলিক আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করেছিল। 
------xx------

এই প্রশ্নটিই অন্য যেভাবে আসতে পারে :

  1. ভৌগোলিক আবিষ্কার বলতে কী বোঝো?  পঞ্চদশ শতকের ইউরোপে ভৌগোলিক আবিষ্কারের পটভূমি ব্যাখ্যা করো। 
  2.  কোন সময়কে, কেন ভৌগোলিক আবিষ্কারের যুগ বলা হয়?  এ প্রসঙ্গে ইউরোপের ভৌগোলিক আবিষ্কারের কারণ ব্যাখ্যা করো।
  3. পঞ্চদশ শতকে ইউরোপীয় নাবিকদের সমুদ্র অভিযানের কারণ কী ছিল?

সমুদ্র অভিযান সংক্রান্ত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন :

  1. ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলাফল বর্ণনা করো।
  2. নতুন বিশ্ব বলতে কী বোঝো? নতুন বিশ্বে করা কীভাবে উপনিবেশ গড়ে তোলে?
  3. ভৌগোলিক আবিষ্কারে ভাস্কোদাগামা,আমিরিগো ভেসপুচি ও  কলম্বাসের অবদান সংক্ষেপে লেখো।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় প্রশ্নগুলো দেখ

নব্য প্রস্তর যুগ ও তার বৈশিষ্ট লেখো।

নব্য প্রস্তর যুগের সময়কাল উল্লেখ করো। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট লেখো। নব্য প্রস্তর যুগ : প্রাগৈতিহাসিক যুগের শেষ পর্বকে বলা হয় নব্য প্রস্তর যুগ বা Neolithic Age । এই পর্বে আদিম মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক থেকে ক্রমশঃ  খাদ্য উৎপাদক শ্রেণিতে রূপান্তরিত হয়। আনুমানিক ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 4000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ বলা হয়। নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য : ১) এই যুগের মানুষ খাদ্য উৎপাদন শুরু করে। অর্থাৎ কৃষি কাজের সূচনা হয়। ২) পশু শিকারের সাথে সাথে পশুপালনের সূচনা হয়। ৩) হাতিয়ার গুলি খুবই সূচালো, ধারালো ও ক্ষুদ্র আকারের হয়। ৪) চাকার ব্যবহার শুরু হয় ৫) প্রথম আগুন জ্বালানোর কৌশল আবিষ্কার করে  ৬) যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসতি গড়ে উঠতে থাকে। এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

জনপদ কী? প্রাচীন ভারতে জনপদ গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করো।

জনপদ কী? কীভাবে প্রাচীন ভারতে জনপদের উৎপত্তি হয়? জনপদ কী : 'জন' শব্দের অর্থ উপজাতি বা জনগোষ্ঠী। 'পদ' শব্দের অর্থ পা। চার্লস ল্যানম্যান -এর মতে, নির্দিষ্ট কোন জাতিগোষ্ঠী যখন কোন নির্দিষ্ট কোন ভৌগোলিক এলাকায় বসতি গড়ে তোলে তখন সেই ভৌগোলিক এলাকাকে  'জনপদ' বলে। কৌটিল্য জনপদ বলতে  নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও জনসমষ্টিকে বুঝিয়েছেন। এই জনপদে একদিকে থাকবে বিচক্ষণ উচ্চবর্ণের মানুষ বা প্রভু। অন্যদিকে থাকবে - ১) পর্যাপ্ত পরিমাণ উর্বর জমি এবং ২) সেই ভূখন্ডে থাকবে প্রচুর পরিশ্রমী কৃষক যাদের কর প্রদানের চাপ ও শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা থাকবে।  জনপদ গড়ে ওঠার কারণ (পটভূমি) : আর্যদের আগমন : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে আর্যরা ভারতে প্রবেশ করে। এর ছিল যাযাবর প্রকৃতির । কারণ, পশু খাদ্যের সন্ধানে তারা বসবাসের জায়গা পরিবর্তন করত। তবে তারা গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন যাপন করত। তাই এদের 'জন' (জনগোষ্ঠী বা উপজাতি) বলা হত।  জনসংখ্যা বৃদ্ধি : সপ্ত সিন্ধু এলাকায় উর্বর ভূমির কল্যাণে আর্যদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রবণতা বাড়ে। ফলে নির্দিষ্ট এলাকায় জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। ক্রমশ তারা অর্ধ-যাযাবর জীবনে ...

মধ্যপ্রস্তর যুগ বলতে কোন সময়কালকে বোঝানো হয়? এই যুগের বৈশিষ্ট্য লেখো

'মধ্যপ্রস্তর যুগ' ও তার বৈশিষ্ট্য প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ পর্ব ( ১৫ হাজার বছর আগে ) থেকে হোলোসিন যুগের সূচনা পর্ব ( ১০ হাজার বছর ) পর্যন্ত সময়কালকে মধ্যপ্রস্তর যুগ বলে। অন্যভাবে বলা বলা যায়, খাদ্য সংগ্রহকারী প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং খাদ্য উৎপাদনকারী নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কালকে 'মধ্য প্রস্তর যুগ' বলা হয়। মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য ঃ ১) সময়কাল : মধ্য প্রস্তর যুগ খ্রিষ্টপুর্ব ১৫ হাজার বছর থেকে ১০ হাজার বছর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ২) হাতিয়ার :  এই যুগের ( মধ্য প্রস্তর যুগ ) হাতিয়ারগুলি প্রাচীন প্রস্তর যুগের চেয়ে উন্নত ও আকারে ছোটো ছিল। পাথর ছাড়া জীবজন্তুর হাড়, দাঁত ইত্যাদিও হাতিয়ার তৈরিতে ব্যবহার করা হত। ৩) জীবিকা ও জীবনযাপন : মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল পশু শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ। এবং জীবনযাত্রা ছিল অর্ধ যাযাবর প্রকৃতির। ৪) কৃষিকাজ : যুগের শেষ পর্বে মানুষ কৃষিকাজের সূচনা করে। ৫) পোষাক :  মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ প্রাচীন প্রস্তর যুগের মত গাছের ছাল ও পশুর চামড়া দিয়ে পোশাক বানাত। তবে এই পোশাক আগের চেয়ে উন্নতমানের ছিল। ৬) যানবাহন : এই ...

প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি বর্ননা করো।

প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি Describe-the-reasons-or-background-for-the-development-of-city-states-in-ancient-Greece পলিস শব্দের অর্থ ' নগররাষ্ট্র '। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শতকে মধ্যবর্তী সময়ে গ্রিসে প্রায় ১৫০০ টি ছোট ছোট রাষ্ট্র বা সিটি স্টেট গড়ে ওঠে। এগুলির যাবতীয় কাজকর্মে নাগরিকরাই প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্ৰহণ করত। এই ছোট রাষ্ট্রগুলো পলিস বা নগর-রাষ্ট্র নামে পরিচিত। যেমন - এথেন্স, স্পার্টা ইত্যাদি। নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সামনে আসে।  ১) বৈদেশিক আক্রমণ ও  অক্টোপলিস  : আনুমানিক ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে গ্রীকরা বৈদেশিক আক্রমণের ভয়ে গ্রিসের বিভিন্ন পাহাড়ের শিখরে শক্তিশালী কেন্দ্র গড়ে তোলে। এগুলো 'অক্টোপলিস' নামে পরিচিত। এই অক্টোপলিসকে কেন্দ্র করে ক্রমশ নগর গড়ে ওঠে এবং এই নগরকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে নগররাষ্ট্র বা পলিস গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।  ২) স্থানীয় বাজার : আস্তে আস্তে এই  'অক্টোপলিস'গুলোর কাছেই স্থানীয় বাজার গড়ে উঠতে থাকে।...

প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

প্রাচীন, মধ্য ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে পার্থক্য বাংলা 👉 English অথবা,  প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে তুলনা করো।

মহাজনপদ কী? মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো।

মহাজনপদ কী? মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো। মহাজনপদ ও মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য  What is Mahajanapada? Briefly write the characteristics of Mahajanapada. মহাজনপদ কী : 'মহা' অর্থ বৃহৎ। 'জনপদ' কথার অর্থ 'নির্দিষ্ট ভূখণ্ডসহ জনসমষ্টি। অর্থাৎ  ক্ষুদ্র রাজ্য। খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের আগে ভারতে উপজাতি গোষ্ঠীভিত্তিক ছোট ছোট জনপদ গড়ে উঠেছিল। এই জনপদ গুলি পরস্পরের ভূখণ্ড দখল করার তাগিদে নিজেদের মধ্যে সব সময় সংঘর্ষে লিপ্ত থাকতো। এই সংঘর্ষে জয় পরাজয়ের সূত্র ধরেই উত্তর ভারতে একাধিক জনপদ সংযুক্ত হয়ে যেত। ফলে বৃহৎ জনপদ বা রাজ্যের জন্ম হয়। এই ধরনের বৃহৎ জনপদ বা রাজ্যগুলি ' মহাজনপদ' নামে পরিচিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর তিনটি উল্লেখযোগ্য মহাজনপদের নাম হলো মগধ (রাজতান্ত্রিক), বৃজি ও মল্ল (প্রজাতান্ত্রিক)। মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য : এই মহাজনপদগুলির ভৌগোলিক অবস্থান ও রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।           ১) উত্তর ভারত কেন্দ্রিক অবস্থান :   ডক্টর হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী মতে, মহাজনপদ গুলির অধিকাংশের অবস্থ...

প্রাক-ঐতিহাসিক (প্রাগৈতিহাসিক) যুগ কাকে বলে ?

  প্রাক-ঐতিহাসিক যুগ মানব সভ্যতার সূচনা হয় আজ থেকে ৩৬ লক্ষ্য বছর আগে। এই সময় থেকে লিপির ব্যবহার শুরু হওয়ার মধ্যবর্তী সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়। এই সময়ের ইতিহাস রচনার কোন লিখিত উপাদান পাওয়া যায় না। ফলে শুধুমাত্র প্রত্নতাত্বিক উপাদানের ওপর ভিত্তি করেই ইতিহাস লেখা হয়। তবে সব দেশে একই সময়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনা হয়নি।  -----🙏---- বিকল্প প্রশ্ন : ১) প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলতে কী বোঝো? আরও পড়ো : ১)   প্রাগৈতিহাসিক যুগের বৈশিষ্ট্য কী ছিলো ?                     ২) প্রাগৈতিহাসিক যুগকে কয়ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ? এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থান

 প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থানের ওপর একটি প্রবন্ধ রচনা করো। সমাজে নারীর অবস্থান : প্রাচীনকালে গ্রীস ও রোমের মত ভারতীয় নারীরাও সমাজে বিশিষ্ট স্থান অধিকার লাভ করেছিল। তবে তা মূলত উচ্চশ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।  ঋগবৈদিক যুগে নারীর অবস্থান :  নারীর গুরুত্ব : পুত্র সন্তান কাম্য হলেও নারীরা মেটেও অবহেলিত ছিল না।  নারী শিক্ষা : নারীরা যথেষ্ট শিক্ষার সুযোগ লাভ করেছিল। এ যুগের উল্লেখযোগ্য বিদুষী নারী ছিলেন - লোপমুদ্রা, ঘোষা, অপলা মমতা প্রমুখ। বেদ পাঠের অধিকার : এই সময় নারীদের বেদ পাঠের অধিকার ছিল বলেও জানা যায়। এমনকী বেদের স্তোত্র রচনায় অংশ নিয়েছিল বলে জানা যায়।  পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থান : নারীর গুরুত্ব হ্রাস : এই সময় নারী বেদ পাঠের অধিকার হারায়।  নারী শিক্ষা উপেক্ষিত : তৈত্তিরীয় সংহিতায় নারী শিক্ষার প্রয়োজন নেই বলে জানান হয়। ফলে নারী শিক্ষা ব্যাহত হয়। তা সত্ত্বেও এ সময় কোন কোন নারী উচ্চশিক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। যেমন, গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রমুখ।  প্রতিবাদী আন্দোলনের যুগে নারীর অবস্থান : নারী শিক্ষা : বৌদ্ধ গ্রন্থ বিনয়পিটক থেকে জানা...

প্রাচীন প্রস্তর বলতে কী বোঝ? প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল উল্লেখ করো। এই যুগের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলতে কী বোঝ? প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ ভাগে (৫০ হাজার - ১৫ হাজার আগে) পৃথিবীতে প্রায়-মানুষেরা ( হোমো ইরেক্টাস)  পাথরকে আকারগত পরিবর্তন না করেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত। তাই তাদের হাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ ও বৃত্তাকার। এই ধরণের অস্ত্র ব্যবহারকারী মানুষের সময়কালকে (যুগকে) 'প্রাচীন প্রস্তর যুগ' বলা হয়। প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল : প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় প্রায় ১৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন প্রস্তর  যুগের বৈশিষ্ট্য ঃ প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় প্রায় ১৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই যুগের মানুষ বিভিন্ন ধরণের পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহার করত। এই পর্বের মানুষ পাথরকে আকারগত পরিবর্তন না করেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত। তাই তাদের হাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ ও বৃত্তাকার। এই যুগের শেষ দিকে মানুষ তীরধনুক আবিষ্কার করে। এই পর্বের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত পশু শিকার, ফলমূল সংগ্রহ এবং মাছ ধরে। এই সময় মানুষ আগুনের ব্যবহার জানত না। তাই তারা কাঁচা মাংস খেত। মানুষ ছোট ছোট গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করত। অর্থাৎ তাদের ...

প্রাচীন গ্রিসে ক্রীতদাস প্রথা ও তাঁর উৎপত্তি

ক্রীতদাস বলতে কী বোঝ? প্রাচীন গ্রিসে কীভাবে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত? ক্রীতদাস : ক্রীতদাস কাদের বলা হবে, এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ডিও ক্রাইসস্টম ক্রীতদাসদের গবাদি পশুর সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, গবাদি পশু যেমন তাঁর প্রভুর সম্পত্তি, ঠিক তেমনি ক্রীতদাস হল একজন প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি, যা তিনি ইচ্ছামত বিক্রয় কিম্বা কোন উৎপাদনের কাজে লাগাতে পারে।  প্রখ্যত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল বলছেন, ক্রীতদাস হল এমন এক সত্তা যার কোন পৃথক বা স্বাধীন অস্তিত্ব নেই। প্রভুর মালিকানাধীনে থাকার ওপরই তার অস্তিত্ব নির্ভর করে এবং এটাই প্রকৃতিরই বিধান। সুতরাং প্রাচীন গ্রিসের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, ক্রীতদাস হল এক ধরণের মানব সম্পদ, যা প্রকৃতির বিধান অনুযায়ী তার প্রভুর মানিকানাধীন থাকতে বাধ্য এবং প্রভু তার নিজের ইচ্ছামত তাকে ক্রয়, বিক্রয় কিম্বা বিভিন্ন উৎপাদন কর্মে নিয়োগ করতে পারে। ক্রীতদাস প্রথা : প্রাচীন গ্রিসের সমাজ ব্যবস্থায় প্রচলিত এবং আইনি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসদের ক্রয়, বিক্রয় ও প্রভুর নিজস্ব ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে উৎপাদন কিম্বা সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োগ করার অধিকার সম্বলিত সামাজিক প্রথার নাম ক...