সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

টমাস ক্রমওয়েলের কার্যাবলী মূল্যায়ন

টমাস ক্রমওয়েলের কার্যাবলী / সংস্কারগুলোর মূল্যায়ন করো।

Evaluate the works of Thomas Cromwell., টমাস ক্রমওয়েলের কার্যাবলী মূল্যায়ন
টমাস ক্রমওয়েলের কার্যাবলী মূল্যায়ন
ইংল্যান্ডের টিউটর বংশের রাজা অষ্টম হেনরির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন টমাস ক্রময়েল। ‘নব্য রাজতন্ত্রে’ রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধিই ছিল তাঁর প্রধান লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ (সংস্কার) করেছিলেন। এই পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে টমাস ক্রমওয়েল যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছিলেন, তা ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ‘টিউডর বিপ্লব’ নামে পরিচিত।

টমাস ক্রমওয়েল বিভিন্ন পদক্ষেপ / সংস্কার :

বিবাহ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান : 

অষ্টম হেনরির কোন পুত্রসন্তান ছিল না। এই পরিস্থিতিতে তিনি অ্যানবোলিন নামে এক মহিলাকে বিবাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ও পোপের অনুমোদন ছাড়া এই বিবাহ বৈধ নয়। কিন্তু পোপ বিবাহবিচ্ছেদে অনুমোদন দিতে অস্বীকার করলে সমস্যা তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে ক্রমওয়েল রাজার পুনর্বিবাহের অনুকূলে আইন (‘অ্যাক্ট অব অ্যাপিলস’) প্রণয়ন করে এই সমস্যার সমাধান করেন।

রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি : 

রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একাধারে তিনি পাঁচটি আইন পাশ করেন। 
  1. ‘অ্যাক্ট অব অ্যানেটস’ পাশ করে যাজকদের আয়ের অংশ পোপের পরিবর্তে রাজাকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। 
  2. ‘অ্যাক্ট অব সাকসেশন’ এর মাধ্যমে প্রথম স্ত্রীর কন্যা মেরিকে বঞ্চিত করে অনবলিনের সন্তানের উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। 
  3. অ্যাক্ট অব সুপ্রিমেসির মাধ্যমে রাজাকে ধর্মাধিষ্ঠানের সর্বময় কর্তা ঘোষণা করা হয়। 
  4. ‘অ্যাক্ট অব ট্ৰিজন’-এর মাধ্যমে রাজার বিরোধিতাকে রাজদ্রোহিতা হিসাবে গণ্য করা হয়।

পোপের ক্ষমতা হ্রাস : 

পোপের ক্ষমতা হ্রাস করার জন্য টমাস ক্রমওয়েলের দুটি আইন প্রয়োগ করেন :
  1. ‘অ্যাক্ট অব অ্যাপিলস’ প্রনয়নের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের যাজকদের বিচার সংক্রান্ত আপিল পোপের কাছে পাঠানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। 
  2. ‘রোমের বিশপদের ক্ষমতা বাতিলকরন আইন’-এর মাধ্যমে পোপের ক্ষমতা রক্ষার জন্য কেউ চেষ্টা করলে তার সম্পত্তি রাষ্ট্র বাজেয়াপ্ত করবে বলে ঘোষণা করা হয়।

পার্লামেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি : 

রাজতন্ত্রের সম্মান বৃদ্ধির পাশাপাশি ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টকেও তিনি শক্তিশালী করে তোলেন। তিনি রাজাকে নিয়েই ঘোষণা করান —
  1. রাজার সার্বভৌম ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতেই নিহিত। 
  2. তিনি পার্লামেন্টের সদস্যদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, গ্রেফতারের হাত থেকে মুক্ত থাকা ইত্যাদি অধিকার দেন। 
এভাবে ক্রময়েল ভবিষ্যৎ ইংল্যান্ডের জন্য ‘সীমাবদ্ধ রাজতন্ত্র’ এবং পার্লামেন্টের সুদীর্ঘ ক্ষমতার কাঠামোটি গড়ে তোলেন। 

বাইবেলের অনুবাদ : 

ইংরেজিতে অনুদিত এবং বিদেশে মুদ্রিত যেসব বাইবেল গোপনে ইংল্যান্ডে আনা হয়েছিল, তা ধ্বংস করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ক্রমওয়েল বাইবেলের ইংরেজি অনুবাদের জন্য মাইলস কভারডালকে দায়িত্ব দেন। ১৫৩৭ সালে ইংল্যান্ডে প্রকাশিত এই বাইবেল ‘গ্রেট বাইবেল’ নামে পরিচিত। এই গ্রন্থ ইংল্যান্ডের প্রতিটি চার্চে রাখা এবং ব্যক্তিগতভাবে জনগণকে কেনার অনুমতি দেয়া হয়। 

মঠের প্রাধান্য ধ্বংস : 

ইংল্যান্ডের মঠগুলির উপর রাজার আধিপত্য বিস্তারের জন্য টমাস ক্রমওয়েল দুইটি উচ্ছেদ আইন প্রণয়ন করেন। 
  1. ‘দ্য সাপ্রেশন অফ রিলিজিয়াস হাউস এক্ট, ১৫৩৬’ : এই এক্ট-এর মাধ্যমে ২ ০ ০ পাউন্ডের কম বাৎসরিক আয় সম্পন্ন মাঠগুলিকে দুর্নীতির অভিযোগে ভেঙে দেন। এবং এদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন। 
  2. ‘দ্য সাপ্রেশন অফ রিলিজিয়াস হাউস এক্ট, ১৫৩৯’ : এই আইনের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের অবশিষ্ট নোটগুলিকে উচ্ছেদ করেন এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাজার অধিকারে আনা হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৫৩৬ সালে উত্তর ইংল্যান্ডে ‘পিলগ্রিমেস অফ গ্রেস’ নামে এক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। টমাস প্রমোয়েল কঠোর হাতে এই বিদ্রোহ দমন করেন এবং বিদ্রোহের নেতাদের প্রাণদণ্ড দেন।

টমাস ক্রমওয়েলের সংস্কারের ফলাফল :

টমাস ক্রমওয়েলের এইসব সংস্কার কার্যের ফলে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। 
প্রথমত : মঠ ব্যবস্থার উচ্ছেদের মাধ্যমে চার্চের সামগ্রিক বিষয়ের উপরে রাজার কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়।
দ্বিতীয়ত : মঠের সমস্ত সম্পত্তি সহজ শর্তে নিলামে বিক্রি করা হলে নতুন জমিদার শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে। 
তৃতীয়ত : ছোট মাঠগুলো ধ্বংস হওয়ায় ইংল্যান্ডের দরিদ্র মানুষজনেরা অতিরিক্ত ধর্মকর প্রদানের হাত থেকে মুক্তি পায়। 
চতুর্থত : এই ছোট মাঠ গুলির বিলুপ্তি ঘটলে এখানে নিযুক্ত বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। 
পঞ্চমত : ইংল্যান্ডের এইসব প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য একটি জাতীয় আমলা তন্ত্র গড়ে ওঠে। ১৯ জন মন্ত্রী কে নিয়ে গড়ে ওঠে প্রিভি কাউন্সিল। 
ষষ্ঠত : ইংল্যান্ডে রাষ্ট্র ও চার্চ উভয়ের উপর রাজার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে রাজা ও পার্লামেন্ট উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সপ্তমত : ‘অ্যাক্ট অ্যাপিলস’ এর মাধ্যমে ইংল্যান্ডকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়। ফলে জাতীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। 

টমাস ক্রমওয়েলের মূল্যায়ন :

বস্তুতপক্ষে, ইংল্যান্ডের আধুনিক শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর বিকাশে টমাস ক্রোমোয়েলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। রাজা ও পার্লামেন্টের ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। প্রকৃতপক্ষে তাঁর গৃহীত নীতির ফলেই ইংল্যান্ডে ‘নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রে’র ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
--------xx-------

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় প্রশ্নগুলো দেখ

নব্য প্রস্তর যুগ ও তার বৈশিষ্ট লেখো।

নব্য প্রস্তর যুগের সময়কাল উল্লেখ করো। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট লেখো। নব্য প্রস্তর যুগ : প্রাগৈতিহাসিক যুগের শেষ পর্বকে বলা হয় নব্য প্রস্তর যুগ বা Neolithic Age । এই পর্বে আদিম মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক থেকে ক্রমশঃ  খাদ্য উৎপাদক শ্রেণিতে রূপান্তরিত হয়। আনুমানিক ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 4000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ বলা হয়। নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য : ১) এই যুগের মানুষ খাদ্য উৎপাদন শুরু করে। অর্থাৎ কৃষি কাজের সূচনা হয়। ২) পশু শিকারের সাথে সাথে পশুপালনের সূচনা হয়। ৩) হাতিয়ার গুলি খুবই সূচালো, ধারালো ও ক্ষুদ্র আকারের হয়। ৪) চাকার ব্যবহার শুরু হয় ৫) প্রথম আগুন জ্বালানোর কৌশল আবিষ্কার করে  ৬) যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসতি গড়ে উঠতে থাকে। এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থান

 প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থানের ওপর একটি প্রবন্ধ রচনা করো। সমাজে নারীর অবস্থান : প্রাচীনকালে গ্রীস ও রোমের মত ভারতীয় নারীরাও সমাজে বিশিষ্ট স্থান অধিকার লাভ করেছিল। তবে তা মূলত উচ্চশ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।  ঋগবৈদিক যুগে নারীর অবস্থান :  নারীর গুরুত্ব : পুত্র সন্তান কাম্য হলেও নারীরা মেটেও অবহেলিত ছিল না।  নারী শিক্ষা : নারীরা যথেষ্ট শিক্ষার সুযোগ লাভ করেছিল। এ যুগের উল্লেখযোগ্য বিদুষী নারী ছিলেন - লোপমুদ্রা, ঘোষা, অপলা মমতা প্রমুখ। বেদ পাঠের অধিকার : এই সময় নারীদের বেদ পাঠের অধিকার ছিল বলেও জানা যায়। এমনকী বেদের স্তোত্র রচনায় অংশ নিয়েছিল বলে জানা যায়।  পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থান : নারীর গুরুত্ব হ্রাস : এই সময় নারী বেদ পাঠের অধিকার হারায়।  নারী শিক্ষা উপেক্ষিত : তৈত্তিরীয় সংহিতায় নারী শিক্ষার প্রয়োজন নেই বলে জানান হয়। ফলে নারী শিক্ষা ব্যাহত হয়। তা সত্ত্বেও এ সময় কোন কোন নারী উচ্চশিক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। যেমন, গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রমুখ।  প্রতিবাদী আন্দোলনের যুগে নারীর অবস্থান : নারী শিক্ষা : বৌদ্ধ গ্রন্থ বিনয়পিটক থেকে জানা যায় এই সময় নারীদের বিদ্যা শিক্ষাকে স্বীকৃতি

প্রাক-ঐতিহাসিক (প্রাগৈতিহাসিক) যুগ কাকে বলে ?

  প্রাক-ঐতিহাসিক যুগ মানব সভ্যতার সূচনা হয় আজ থেকে ৩৬ লক্ষ্য বছর আগে। এই সময় থেকে লিপির ব্যবহার শুরু হওয়ার মধ্যবর্তী সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়। এই সময়ের ইতিহাস রচনার কোন লিখিত উপাদান পাওয়া যায় না। ফলে শুধুমাত্র প্রত্নতাত্বিক উপাদানের ওপর ভিত্তি করেই ইতিহাস লেখা হয়। তবে সব দেশে একই সময়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনা হয়নি।  -----🙏---- বিকল্প প্রশ্ন : ১) প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলতে কী বোঝো? আরও পড়ো : ১)   প্রাগৈতিহাসিক যুগের বৈশিষ্ট্য কী ছিলো ?                     ২) প্রাগৈতিহাসিক যুগকে কয়ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ? এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

মধ্যপ্রস্তর যুগ বলতে কোন সময়কালকে বোঝানো হয়? এই যুগের বৈশিষ্ট্য লেখো

'মধ্যপ্রস্তর যুগ' ও তার বৈশিষ্ট্য প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ পর্ব ( ১৫ হাজার বছর আগে ) থেকে হোলোসিন যুগের সূচনা পর্ব ( ১০ হাজার বছর ) পর্যন্ত সময়কালকে মধ্যপ্রস্তর যুগ বলে। অন্যভাবে বলা বলা যায়, খাদ্য সংগ্রহকারী প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং খাদ্য উৎপাদনকারী নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কালকে 'মধ্য প্রস্তর যুগ' বলা হয়। মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য ঃ ১) সময়কাল : মধ্য প্রস্তর যুগ খ্রিষ্টপুর্ব ১৫ হাজার বছর থেকে ১০ হাজার বছর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ২) হাতিয়ার :  এই যুগের ( মধ্য প্রস্তর যুগ ) হাতিয়ারগুলি প্রাচীন প্রস্তর যুগের চেয়ে উন্নত ও আকারে ছোটো ছিল। পাথর ছাড়া জীবজন্তুর হাড়, দাঁত ইত্যাদিও হাতিয়ার তৈরিতে ব্যবহার করা হত। ৩) জীবিকা ও জীবনযাপন : মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল পশু শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ। এবং জীবনযাত্রা ছিল অর্ধ যাযাবর প্রকৃতির। ৪) কৃষিকাজ : যুগের শেষ পর্বে মানুষ কৃষিকাজের সূচনা করে। ৫) পোষাক :  মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ প্রাচীন প্রস্তর যুগের মত গাছের ছাল ও পশুর চামড়া দিয়ে পোশাক বানাত। তবে এই পোশাক আগের চেয়ে উন্নতমানের ছিল। ৬) যানবাহন : এই যুগের মানুষ ক

মহাজনপদ কী? মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো।

মহাজনপদ কী? মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো। মহাজনপদ ও মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য  What is Mahajanapada? Briefly write the characteristics of Mahajanapada. মহাজনপদ কী : 'মহা' অর্থ বৃহৎ। 'জনপদ' কথার অর্থ 'নির্দিষ্ট ভূখণ্ডসহ জনসমষ্টি। অর্থাৎ  ক্ষুদ্র রাজ্য। খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের আগে ভারতে উপজাতি গোষ্ঠীভিত্তিক ছোট ছোট জনপদ গড়ে উঠেছিল। এই জনপদ গুলি পরস্পরের ভূখণ্ড দখল করার তাগিদে নিজেদের মধ্যে সব সময় সংঘর্ষে লিপ্ত থাকতো। এই সংঘর্ষে জয় পরাজয়ের সূত্র ধরেই উত্তর ভারতে একাধিক জনপদ সংযুক্ত হয়ে যেত। ফলে বৃহৎ জনপদ বা রাজ্যের জন্ম হয়। এই ধরনের বৃহৎ জনপদ বা রাজ্যগুলি ' মহাজনপদ' নামে পরিচিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর তিনটি উল্লেখযোগ্য মহাজনপদের নাম হলো মগধ (রাজতান্ত্রিক), বৃজি ও মল্ল (প্রজাতান্ত্রিক)। মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য : এই মহাজনপদগুলির ভৌগোলিক অবস্থান ও রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।           ১) উত্তর ভারত কেন্দ্রিক অবস্থান :   ডক্টর হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী মতে, মহাজনপদ গুলির অধিকাংশের অবস্থান ছিল বিহার, উত

জনপদ কী? প্রাচীন ভারতে জনপদ গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করো।

জনপদ কী? কীভাবে প্রাচীন ভারতে জনপদের উৎপত্তি হয়? জনপদ কী : 'জন' শব্দের অর্থ উপজাতি বা জনগোষ্ঠী। 'পদ' শব্দের অর্থ পা। চার্লস ল্যানম্যান -এর মতে, নির্দিষ্ট কোন জাতিগোষ্ঠী যখন কোন নির্দিষ্ট কোন ভৌগোলিক এলাকায় বসতি গড়ে তোলে তখন সেই ভৌগোলিক এলাকাকে  'জনপদ' বলে। কৌটিল্য জনপদ বলতে  নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও জনসমষ্টিকে বুঝিয়েছেন। এই জনপদে একদিকে থাকবে বিচক্ষণ উচ্চবর্ণের মানুষ বা প্রভু। অন্যদিকে থাকবে - ১) পর্যাপ্ত পরিমাণ উর্বর জমি এবং ২) সেই ভূখন্ডে থাকবে প্রচুর পরিশ্রমী কৃষক যাদের কর প্রদানের চাপ ও শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা থাকবে।  জনপদ গড়ে ওঠার কারণ (পটভূমি) : আর্যদের আগমন : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে আর্যরা ভারতে প্রবেশ করে। এর ছিল যাযাবর প্রকৃতির । কারণ, পশু খাদ্যের সন্ধানে তারা বসবাসের জায়গা পরিবর্তন করত। তবে তারা গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন যাপন করত। তাই এদের 'জন' (জনগোষ্ঠী বা উপজাতি) বলা হত।  জনসংখ্যা বৃদ্ধি : সপ্ত সিন্ধু এলাকায় উর্বর ভূমির কল্যাণে আর্যদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রবণতা বাড়ে। ফলে নির্দিষ্ট এলাকায় জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। ক্রমশ তারা অর্ধ-যাযাবর জীবনে

প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি বর্ননা করো।

প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি Describe-the-reasons-or-background-for-the-development-of-city-states-in-ancient-Greece পলিস শব্দের অর্থ ' নগররাষ্ট্র '। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শতকে মধ্যবর্তী সময়ে গ্রিসে প্রায় ১৫০০ টি ছোট ছোট রাষ্ট্র বা সিটি স্টেট গড়ে ওঠে। এগুলির যাবতীয় কাজকর্মে নাগরিকরাই প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্ৰহণ করত। এই ছোট রাষ্ট্রগুলো পলিস বা নগর-রাষ্ট্র নামে পরিচিত। যেমন - এথেন্স, স্পার্টা ইত্যাদি। নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সামনে আসে।  ১) বৈদেশিক আক্রমণ ও  অক্টোপলিস  : আনুমানিক ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে গ্রীকরা বৈদেশিক আক্রমণের ভয়ে গ্রিসের বিভিন্ন পাহাড়ের শিখরে শক্তিশালী কেন্দ্র গড়ে তোলে। এগুলো 'অক্টোপলিস' নামে পরিচিত। এই অক্টোপলিসকে কেন্দ্র করে ক্রমশ নগর গড়ে ওঠে এবং এই নগরকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে নগররাষ্ট্র বা পলিস গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।  ২) স্থানীয় বাজার : আস্তে আস্তে এই  'অক্টোপলিস'গুলোর কাছেই স্থানীয় বাজার গড়ে উঠতে থাকে।

ঐতিহাসিক যুগ কাকে বলে? এর বৈশিষ্ঠগুলো উল্লেখ করো। উদাহরণ দাও।

ঐতিহাসিক যুগ কাকে বলে? এর বৈশিষ্ঠগুলো উল্লেখ করো। উদাহরণ দাও।  ঐতিহাসিক যুগ বলতে সেই সময়কালকে বোঝায়, যখন ১) মানুষ লিখন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, ২) তাদের জীবনযাপন প্রণালী, সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিবররণ রেখে গেছেন, এবং সেই সব বিবরণের পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়ছে।  উদাহরণ হিসাবে মিশরিয় ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতার কথা বলা যায়।   খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে মিশরে এবং  খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে ভারতে, (আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময়) এই যুগের সূচনা ধরা হয় । ঐতিহাসিক যুগের বৈশিষ্ট্য : ১) এই যুগে মানুষের লিপিজ্ঞান ছিল।  ২) এই লিপির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়েছে, ৩) এই যুগের সময়কাল পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সূচনা হয়েছে।  এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

প্রাচীন, মধ্য ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে পার্থক্য বাংলা 👉 English অথবা,  প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে তুলনা করো।

প্রাচীন প্রস্তর বলতে কী বোঝ? প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল উল্লেখ করো। এই যুগের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলতে কী বোঝ? প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ ভাগে (৫০ হাজার - ১৫ হাজার আগে) পৃথিবীতে প্রায়-মানুষেরা ( হোমো ইরেক্টাস)  পাথরকে আকারগত পরিবর্তন না করেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত। তাই তাদের হাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ ও বৃত্তাকার। এই ধরণের অস্ত্র ব্যবহারকারী মানুষের সময়কালকে (যুগকে) 'প্রাচীন প্রস্তর যুগ' বলা হয়। প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল : প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় প্রায় ১৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন প্রস্তর  যুগের বৈশিষ্ট্য ঃ প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় প্রায় ১৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই যুগের মানুষ বিভিন্ন ধরণের পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহার করত। এই পর্বের মানুষ পাথরকে আকারগত পরিবর্তন না করেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত। তাই তাদের হাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ ও বৃত্তাকার। এই যুগের শেষ দিকে মানুষ তীরধনুক আবিষ্কার করে। এই পর্বের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত পশু শিকার, ফলমূল সংগ্রহ এবং মাছ ধরে। এই সময় মানুষ আগুনের ব্যবহার জানত না। তাই তারা কাঁচা মাংস খেত। মানুষ ছোট ছোট গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করত। অর্থাৎ তাদের মধ্যে