সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভৌগোলিক আবিষ্কারের সুদূরপ্রসারী ফলাফল

ভৌগোলিক আবিষ্কারের সুদূরপ্রসারী ফলাফল আলোচনা করো

Far-reaching consequences of geographical discoveries, ভৌগোলিক আবিষ্কারের সুদূরপ্রসারী ফলাফল,
ভৌগোলিক আবিষ্কারের সুদূরপ্রসারী ফলাফল

ভৌগোলিক আবিষ্কার পৃথিবীর ইতিহাসের একটি যুগান্তকারী ঘটনা। কারণ, এর ফলাফল বা তাৎপর্য ছিল গভীর ও সুদূরপ্রসারী। প্রকৃত অর্থে পৃথিবীর চেহারাটাই পাল্টে গিয়েছিল এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।

ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলাফল :

  1. ভৌগোলিক জ্ঞানবৃদ্ধি :  ভৌগোলিক অভিযানের ফলে ইউরোপীয়দের ভৌগোলিক জ্ঞানের প্রসার ঘটে। ১) ম্যাগেলান ও তাঁর সঙ্গীদের অভিযানের ফলে প্রমাণিত হয় পৃথিবী চ্যাপ্টা নয়, গোলাকার। ২) উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সহ পৃথিবীর বহু নতুন দেশ ও মহাদেশের কথা তারা জানতে পারে।  ৩) আবিষ্কার হয় প্রাচ্যে যাওয়ার জলপথ।
  2. প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক :  ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলে নতুন দেশগুলির সভ্যতা ও সংস্কৃতির সঙ্গে ইউরোপীয়দের পরিচয় ঘটে। এই পরিচয় সূত্রে উভয়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান শুরু হয়।
  3. নতুন বাণিজ্য পথ : এতদিন ভূমধ্যসাগর ও তার তীরবর্তী অঞ্চল ছিল ইউরোপের বাণিজ্য ও সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র। ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগের নতুন পথ হিসেবে আটলান্টিক মহাসাগরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
  4. ক্রীতদাস আমদানি : ভৌগোলিক আবিষ্কারের সূত্র ধরেই এশিয়া ও আফ্রিকার সাধারণ মানুষদের বন্দী করে তাদের ক্রীতদাসে পরিণত করা হয়। ফলে দাস ব্যবসার উদ্ভব হয়। শুধু পর্তুগালেই প্রতিবছর গড়ে ৮০০ জন আফ্রিকান ক্রীতদাস আমদানি করা হত।
  5. উপনিবেশ স্থাপন ও শোষণ : ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলে ইউরোপীয় দেশগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ স্থাপনের সুযোগ হয়। এর ফলে একদিকে ইংল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন, হল্যান্ড পরস্পরের মধ্যে ঔপনিবেশিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। অন্যদিকে, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলি ইউরোপীয়দের উপনিবেশে পরিণত হয়। শুরু হয় উপনিবেশ শাসনের নামে আর্থ-সামাজিক শোষণ ও নির্যাতন।
  6. ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার : নতুন নতুন দেশ ও জলপথ আবিষ্কারের ফলে ইউরোপে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। নতুন এই দেশগুলি থেকে কাঁচামাল ও অন্যান্য সম্পদ আহরণের সুযোগ ঘটে। সেই সঙ্গে কাঁচামাল সংগ্রহ ও শিল্পপণ্য বিক্রির সুযোগ ঘটে।
  7. একচেটিয়া বাণিজ্যের  সুযোগ : ভৌগোলিক আবিষ্কারের সূত্র ধরেই ইউরোপীয়রা প্রাচ্যের বণিক গোষ্ঠীগুলিকে গায়ের জোরে হটিয়ে দিয়ে সমুদ্রপথে একচেটিয়া বাণিজ্যের সূচনা করে। সেই সঙ্গে ইউরোপীয় দেশগুলি পরস্পরের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়ে।
  8. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি : ভৌগোলিক আবিষ্কারের সূত্র ধরেই ইউরোপীয়রা প্রচুর পরিমাণে সোনা ও রুপো হস্তগত করে। উপনিবেশগুলিতে নতুন কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষির উন্নতি ঘটিয়ে আর্থিক সমৃদ্ধির পথকে প্রশস্ত করে।
  9. ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিকাশ : ভৌগোলিক আবিষ্কারের ফলে বাণিজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় মহাজনি প্রথার বিলোপ ঘটে এবং বিভিন্ন যৌথ বাণিজ্যিক সংস্থা গড়ে ওঠে। এগুলি ক্রমে আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিকাশ ঘটায়।
  10. খ্রিস্টধর্মের প্রসার : ভৌগোলিক আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচারকরা নতুন দেশগুলিতে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের পরিকল্পনা করে। ফলে ইউরোপের বাইরে খ্রিস্টান ধর্মের প্রসার ঘটে।
  11. ইউরোপীয়দের মর্যাদা বৃদ্ধি :  ভৌগোলিক আবিষ্কারে সফল হওয়া দেশগুলির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সামুদ্রিক অভিযানের পৃষ্ঠপোষকতা করে বিভিন্ন দেশের রাজাদের সম্মান, মর্যাদা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়।
  12. মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আবির্ভাব : সামুদ্রিক অভিযানের সূত্র ধরে ইউরোপে শিল্প ও বাণিজ্য অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। ফলে দেশে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও বুর্জুয়া শ্রেণির আবির্ভাব হয়। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রগতিশীল ভাবনা-চিন্তা ইউরোপে বিপ্লববাদের জন্ম দেয়। ফরাসি বিপ্লবসহ একাধিক বিপ্লবের এরাই ছিলেন কুশিলব। 

উপসংহার :

প্রকৃতপক্ষে ভৌগোলিক আবিষ্কারের প্রধান লক্ষ্য ছিল ১) নতুন দেশ জয় ও তাদের ধনসম্পদ লুট করা। ২) ঐ সমস্ত দেশের মানুষকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করা। এবং ৩) এর মাধ্যমে গৌরব অর্জন করা। এই আবিষ্কার যেমন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের মেলবন্ধন ঘটায়, তেমনি কুফল হিসেবে দাস ব্যবসা ও উপনিবেশিক শাসন ও শোষণের পথ প্রশস্ত করে।
----------xx---------

এই প্রশ্নটিই যেভাবে ঘুরিয়ে আসতে পারে :

  1. ভৌগোলিক আবিষ্কারের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
  2. ভৌগলিক আবিষ্কারের গুরুত্ব বর্ণনা করো।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় প্রশ্নগুলো দেখ

নব্য প্রস্তর যুগ ও তার বৈশিষ্ট লেখো।

নব্য প্রস্তর যুগের সময়কাল উল্লেখ করো। এই সময়ের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট লেখো। নব্য প্রস্তর যুগ : প্রাগৈতিহাসিক যুগের শেষ পর্বকে বলা হয় নব্য প্রস্তর যুগ বা Neolithic Age । এই পর্বে আদিম মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক থেকে ক্রমশঃ  খাদ্য উৎপাদক শ্রেণিতে রূপান্তরিত হয়। আনুমানিক ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 4000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ বলা হয়। নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য : ১) এই যুগের মানুষ খাদ্য উৎপাদন শুরু করে। অর্থাৎ কৃষি কাজের সূচনা হয়। ২) পশু শিকারের সাথে সাথে পশুপালনের সূচনা হয়। ৩) হাতিয়ার গুলি খুবই সূচালো, ধারালো ও ক্ষুদ্র আকারের হয়। ৪) চাকার ব্যবহার শুরু হয় ৫) প্রথম আগুন জ্বালানোর কৌশল আবিষ্কার করে  ৬) যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ী বসতি গড়ে উঠতে থাকে। এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

জনপদ কী? প্রাচীন ভারতে জনপদ গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করো।

জনপদ কী? কীভাবে প্রাচীন ভারতে জনপদের উৎপত্তি হয়? জনপদ কী : 'জন' শব্দের অর্থ উপজাতি বা জনগোষ্ঠী। 'পদ' শব্দের অর্থ পা। চার্লস ল্যানম্যান -এর মতে, নির্দিষ্ট কোন জাতিগোষ্ঠী যখন কোন নির্দিষ্ট কোন ভৌগোলিক এলাকায় বসতি গড়ে তোলে তখন সেই ভৌগোলিক এলাকাকে  'জনপদ' বলে। কৌটিল্য জনপদ বলতে  নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও জনসমষ্টিকে বুঝিয়েছেন। এই জনপদে একদিকে থাকবে বিচক্ষণ উচ্চবর্ণের মানুষ বা প্রভু। অন্যদিকে থাকবে - ১) পর্যাপ্ত পরিমাণ উর্বর জমি এবং ২) সেই ভূখন্ডে থাকবে প্রচুর পরিশ্রমী কৃষক যাদের কর প্রদানের চাপ ও শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা থাকবে।  জনপদ গড়ে ওঠার কারণ (পটভূমি) : আর্যদের আগমন : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে আর্যরা ভারতে প্রবেশ করে। এর ছিল যাযাবর প্রকৃতির । কারণ, পশু খাদ্যের সন্ধানে তারা বসবাসের জায়গা পরিবর্তন করত। তবে তারা গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন যাপন করত। তাই এদের 'জন' (জনগোষ্ঠী বা উপজাতি) বলা হত।  জনসংখ্যা বৃদ্ধি : সপ্ত সিন্ধু এলাকায় উর্বর ভূমির কল্যাণে আর্যদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রবণতা বাড়ে। ফলে নির্দিষ্ট এলাকায় জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। ক্রমশ তারা অর্ধ-যাযাবর জীবনে ...

মধ্যপ্রস্তর যুগ বলতে কোন সময়কালকে বোঝানো হয়? এই যুগের বৈশিষ্ট্য লেখো

'মধ্যপ্রস্তর যুগ' ও তার বৈশিষ্ট্য প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ পর্ব ( ১৫ হাজার বছর আগে ) থেকে হোলোসিন যুগের সূচনা পর্ব ( ১০ হাজার বছর ) পর্যন্ত সময়কালকে মধ্যপ্রস্তর যুগ বলে। অন্যভাবে বলা বলা যায়, খাদ্য সংগ্রহকারী প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং খাদ্য উৎপাদনকারী নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কালকে 'মধ্য প্রস্তর যুগ' বলা হয়। মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য ঃ ১) সময়কাল : মধ্য প্রস্তর যুগ খ্রিষ্টপুর্ব ১৫ হাজার বছর থেকে ১০ হাজার বছর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ২) হাতিয়ার :  এই যুগের ( মধ্য প্রস্তর যুগ ) হাতিয়ারগুলি প্রাচীন প্রস্তর যুগের চেয়ে উন্নত ও আকারে ছোটো ছিল। পাথর ছাড়া জীবজন্তুর হাড়, দাঁত ইত্যাদিও হাতিয়ার তৈরিতে ব্যবহার করা হত। ৩) জীবিকা ও জীবনযাপন : মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল পশু শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ। এবং জীবনযাত্রা ছিল অর্ধ যাযাবর প্রকৃতির। ৪) কৃষিকাজ : যুগের শেষ পর্বে মানুষ কৃষিকাজের সূচনা করে। ৫) পোষাক :  মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ প্রাচীন প্রস্তর যুগের মত গাছের ছাল ও পশুর চামড়া দিয়ে পোশাক বানাত। তবে এই পোশাক আগের চেয়ে উন্নতমানের ছিল। ৬) যানবাহন : এই ...

প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি বর্ননা করো।

প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি Describe-the-reasons-or-background-for-the-development-of-city-states-in-ancient-Greece পলিস শব্দের অর্থ ' নগররাষ্ট্র '। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শতকে মধ্যবর্তী সময়ে গ্রিসে প্রায় ১৫০০ টি ছোট ছোট রাষ্ট্র বা সিটি স্টেট গড়ে ওঠে। এগুলির যাবতীয় কাজকর্মে নাগরিকরাই প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্ৰহণ করত। এই ছোট রাষ্ট্রগুলো পলিস বা নগর-রাষ্ট্র নামে পরিচিত। যেমন - এথেন্স, স্পার্টা ইত্যাদি। নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কারণ বা পটভূমি প্রাচীন গ্রিসে নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার পটভূমি বিশ্লেষণ করলেই নগররাষ্ট্র গড়ে ওঠার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সামনে আসে।  ১) বৈদেশিক আক্রমণ ও  অক্টোপলিস  : আনুমানিক ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে গ্রীকরা বৈদেশিক আক্রমণের ভয়ে গ্রিসের বিভিন্ন পাহাড়ের শিখরে শক্তিশালী কেন্দ্র গড়ে তোলে। এগুলো 'অক্টোপলিস' নামে পরিচিত। এই অক্টোপলিসকে কেন্দ্র করে ক্রমশ নগর গড়ে ওঠে এবং এই নগরকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে নগররাষ্ট্র বা পলিস গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।  ২) স্থানীয় বাজার : আস্তে আস্তে এই  'অক্টোপলিস'গুলোর কাছেই স্থানীয় বাজার গড়ে উঠতে থাকে।...

প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

প্রাচীন, মধ্য ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে পার্থক্য বাংলা 👉 English অথবা,  প্রাচীন প্রস্তর যুগ, মধ্য প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যে তুলনা করো।

মহাজনপদ কী? মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো।

মহাজনপদ কী? মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো। মহাজনপদ ও মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য  What is Mahajanapada? Briefly write the characteristics of Mahajanapada. মহাজনপদ কী : 'মহা' অর্থ বৃহৎ। 'জনপদ' কথার অর্থ 'নির্দিষ্ট ভূখণ্ডসহ জনসমষ্টি। অর্থাৎ  ক্ষুদ্র রাজ্য। খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের আগে ভারতে উপজাতি গোষ্ঠীভিত্তিক ছোট ছোট জনপদ গড়ে উঠেছিল। এই জনপদ গুলি পরস্পরের ভূখণ্ড দখল করার তাগিদে নিজেদের মধ্যে সব সময় সংঘর্ষে লিপ্ত থাকতো। এই সংঘর্ষে জয় পরাজয়ের সূত্র ধরেই উত্তর ভারতে একাধিক জনপদ সংযুক্ত হয়ে যেত। ফলে বৃহৎ জনপদ বা রাজ্যের জন্ম হয়। এই ধরনের বৃহৎ জনপদ বা রাজ্যগুলি ' মহাজনপদ' নামে পরিচিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর তিনটি উল্লেখযোগ্য মহাজনপদের নাম হলো মগধ (রাজতান্ত্রিক), বৃজি ও মল্ল (প্রজাতান্ত্রিক)। মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য : এই মহাজনপদগুলির ভৌগোলিক অবস্থান ও রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।           ১) উত্তর ভারত কেন্দ্রিক অবস্থান :   ডক্টর হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী মতে, মহাজনপদ গুলির অধিকাংশের অবস্থ...

প্রাক-ঐতিহাসিক (প্রাগৈতিহাসিক) যুগ কাকে বলে ?

  প্রাক-ঐতিহাসিক যুগ মানব সভ্যতার সূচনা হয় আজ থেকে ৩৬ লক্ষ্য বছর আগে। এই সময় থেকে লিপির ব্যবহার শুরু হওয়ার মধ্যবর্তী সময়কালকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়। এই সময়ের ইতিহাস রচনার কোন লিখিত উপাদান পাওয়া যায় না। ফলে শুধুমাত্র প্রত্নতাত্বিক উপাদানের ওপর ভিত্তি করেই ইতিহাস লেখা হয়। তবে সব দেশে একই সময়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনা হয়নি।  -----🙏---- বিকল্প প্রশ্ন : ১) প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলতে কী বোঝো? আরও পড়ো : ১)   প্রাগৈতিহাসিক যুগের বৈশিষ্ট্য কী ছিলো ?                     ২) প্রাগৈতিহাসিক যুগকে কয়ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ? এই ধরণের আরও প্রশ্ন ও উত্তর  পেতে  এখানে ক্লিক করো ।

প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থান

 প্রাচীন ভারতে নারীর সামাজিক অবস্থানের ওপর একটি প্রবন্ধ রচনা করো। সমাজে নারীর অবস্থান : প্রাচীনকালে গ্রীস ও রোমের মত ভারতীয় নারীরাও সমাজে বিশিষ্ট স্থান অধিকার লাভ করেছিল। তবে তা মূলত উচ্চশ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।  ঋগবৈদিক যুগে নারীর অবস্থান :  নারীর গুরুত্ব : পুত্র সন্তান কাম্য হলেও নারীরা মেটেও অবহেলিত ছিল না।  নারী শিক্ষা : নারীরা যথেষ্ট শিক্ষার সুযোগ লাভ করেছিল। এ যুগের উল্লেখযোগ্য বিদুষী নারী ছিলেন - লোপমুদ্রা, ঘোষা, অপলা মমতা প্রমুখ। বেদ পাঠের অধিকার : এই সময় নারীদের বেদ পাঠের অধিকার ছিল বলেও জানা যায়। এমনকী বেদের স্তোত্র রচনায় অংশ নিয়েছিল বলে জানা যায়।  পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থান : নারীর গুরুত্ব হ্রাস : এই সময় নারী বেদ পাঠের অধিকার হারায়।  নারী শিক্ষা উপেক্ষিত : তৈত্তিরীয় সংহিতায় নারী শিক্ষার প্রয়োজন নেই বলে জানান হয়। ফলে নারী শিক্ষা ব্যাহত হয়। তা সত্ত্বেও এ সময় কোন কোন নারী উচ্চশিক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। যেমন, গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রমুখ।  প্রতিবাদী আন্দোলনের যুগে নারীর অবস্থান : নারী শিক্ষা : বৌদ্ধ গ্রন্থ বিনয়পিটক থেকে জানা...

প্রাচীন প্রস্তর বলতে কী বোঝ? প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল উল্লেখ করো। এই যুগের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলতে কী বোঝ? প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ ভাগে (৫০ হাজার - ১৫ হাজার আগে) পৃথিবীতে প্রায়-মানুষেরা ( হোমো ইরেক্টাস)  পাথরকে আকারগত পরিবর্তন না করেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত। তাই তাদের হাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ ও বৃত্তাকার। এই ধরণের অস্ত্র ব্যবহারকারী মানুষের সময়কালকে (যুগকে) 'প্রাচীন প্রস্তর যুগ' বলা হয়। প্রাচীন প্রস্তর যুগের সময়কাল : প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় প্রায় ১৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন প্রস্তর  যুগের বৈশিষ্ট্য ঃ প্রাচীন প্রস্তর যুগের শুরু হয় ৫০ হাজার বছর আগে এবং শেষ হয় প্রায় ১৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই যুগের মানুষ বিভিন্ন ধরণের পাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহার করত। এই পর্বের মানুষ পাথরকে আকারগত পরিবর্তন না করেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত। তাই তাদের হাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ ও বৃত্তাকার। এই যুগের শেষ দিকে মানুষ তীরধনুক আবিষ্কার করে। এই পর্বের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত পশু শিকার, ফলমূল সংগ্রহ এবং মাছ ধরে। এই সময় মানুষ আগুনের ব্যবহার জানত না। তাই তারা কাঁচা মাংস খেত। মানুষ ছোট ছোট গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করত। অর্থাৎ তাদের ...

প্রাচীন গ্রিসে ক্রীতদাস প্রথা ও তাঁর উৎপত্তি

ক্রীতদাস বলতে কী বোঝ? প্রাচীন গ্রিসে কীভাবে ক্রীতদাস সৃষ্টি হত? ক্রীতদাস : ক্রীতদাস কাদের বলা হবে, এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ডিও ক্রাইসস্টম ক্রীতদাসদের গবাদি পশুর সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, গবাদি পশু যেমন তাঁর প্রভুর সম্পত্তি, ঠিক তেমনি ক্রীতদাস হল একজন প্রভুর ব্যক্তিগত সম্পত্তি, যা তিনি ইচ্ছামত বিক্রয় কিম্বা কোন উৎপাদনের কাজে লাগাতে পারে।  প্রখ্যত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল বলছেন, ক্রীতদাস হল এমন এক সত্তা যার কোন পৃথক বা স্বাধীন অস্তিত্ব নেই। প্রভুর মালিকানাধীনে থাকার ওপরই তার অস্তিত্ব নির্ভর করে এবং এটাই প্রকৃতিরই বিধান। সুতরাং প্রাচীন গ্রিসের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, ক্রীতদাস হল এক ধরণের মানব সম্পদ, যা প্রকৃতির বিধান অনুযায়ী তার প্রভুর মানিকানাধীন থাকতে বাধ্য এবং প্রভু তার নিজের ইচ্ছামত তাকে ক্রয়, বিক্রয় কিম্বা বিভিন্ন উৎপাদন কর্মে নিয়োগ করতে পারে। ক্রীতদাস প্রথা : প্রাচীন গ্রিসের সমাজ ব্যবস্থায় প্রচলিত এবং আইনি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসদের ক্রয়, বিক্রয় ও প্রভুর নিজস্ব ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে উৎপাদন কিম্বা সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োগ করার অধিকার সম্বলিত সামাজিক প্রথার নাম ক...