প্রাচীন গ্রিসের সমাজে দাস ও দাস-প্রভুর সম্পর্ক কেমন ছিল?
প্রাচীন গ্রিসের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, ক্রীতদাস হল এক ধরণের মানব সম্পদ, যা প্রকৃতির বিধান অনুযায়ী তার প্রভুর মানিকানাধীন থাকতে বাধ্য এবং প্রভু তার নিজের ইচ্ছামত তাকে ক্রয়, বিক্রয় কিম্বা বিভিন্ন উৎপাদন কর্মে কাজে নিয়োগ করতে পারে। অর্থাৎ দাস হল একধরণের মনুষ্য-সম্পদ এবং দাস-প্রভু হল তার মালিক।
দাস ও দাস-প্রভুর সম্পর্ক :
গভীর সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এই সম্পর্কের দুটি মুখ লক্ষ্য করা যায়। একটি সুসম্পর্কের অন্যটি নির্যাতনমূলক।
সুসম্পর্কের দিক :
- প্রভু-ভৃত্যের এই সম্পর্ক কখনও কখনও খুবই মধুর হয়ে উঠত। প্রভুর অধীনস্ত দাসরা অনেক সময় স্বাধীন বা বিদেশী শ্রমিকদের সঙ্গে এমনভাবে কাজ করতে পারত যে তাদের আলাদাভাবে দাস হিসাবে চেনা যেত না।
- অনেক সময় দাস ও দাস-প্রভু এক সঙ্গে বসবাস করত। এমনকী এক টেবিলে বসে আহার করার নজিরও রয়েছে।
- এই ধরণের সম্পর্কের কারণে অনেক সময় দেখা যেত দাস তার প্রভুর জীবন রক্ষার জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করতেও দ্বিধা করছে না।
- এই ধরণের সম্পর্কের কারণে দাস-প্রভুও তার অধীনস্ত দাসকে পুরস্কৃত করত। ঐতিহাসিক ফিনলে এই ধরণের দাসকে অর্ধ-স্বাধীন দাস বলে অভিহিত করেছেন।
নির্যাতনমূলক দিক :
আপতদৃষ্টিতে গ্রিসের সমাজে দাস ও দাস-প্রভুর সম্পর্ক মধুর দেখলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা ছিল অলীক কল্পনা।
- আন্তরিকতার অভাব : অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দাস ও দাস-প্রভুর সম্পর্ক ছিল আন্তরিকতা হীন। কারণ, হাজার পরিশ্রম ও আত্মত্যাগের বিনিময়েও দাস জীবন থেকে তারা মুক্তি পেত না।
- কঠোর শাস্তির ভয় : চবুকের আঘাত, বেত্রাঘাত, লোহার ছ্যাঁকা সহ নানা ধরণের নির্যাতন মূলক শাস্তির মুখে পড়তে হত দাসদের। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যের যে সম্পর্ক তা ছিল প্রধানত নির্যাতনমূলক।
- অবিচারের সম্পর্ক : দাসদের প্রতি কোন অন্যায় হলে নিজেদের সপক্ষে আদালতে বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না।
- যৌন নির্যাতনের ভয় : অধিকাংশ কৃতদাসী তার প্রভুর যৌন লালসার শিকার হত। সেনেকার মতে, 'সতীত্ব হারানোর ঘটনা নাগরিকদের কাছে অপরাধ হলেও হলেও কৃতদাসীদের কাছে ছিল অপরিহার্য।
সুতরাং সুসম্পর্কের নজির থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রিসের সমাজে ক্রীতদাস ও দাস-প্রভুর মধ্যে আনুগত্য ও প্রভূত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আর নির্যাতন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এই নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে তারা কখনও পালানোর চেষ্টা করত আবার কখনও বিদ্রোহ ঘোষণা করত।
-------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন