রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় মিশরের রানি ক্লিওপেওট্রার কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করো।
ক্লিওপেট্রা :
ক্লিওপেট্রা ছিলেন প্রাচীন মিশরের টলেমি রাজবংশের একজন কিংবদন্তী নারী, রাজকন্যা ও শাসক। প্রাচীন বিশ্বের ইতিহাসে যে কয়েকজন নারী নিজ প্রতিভাগুণে অমর হয়ে আছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দ্বাদশ টলেমির কন্যা সপ্তম ক্লিওপেট্রা, যিনি ক্লিওপেট্রা নামেই পৃথিবীর ইতিহাসে পরিচিতি পেয়েছেন।
সহ-শাসক ক্লিওপেট্রা :
গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর অন্যতম সেনাপতি টলেমি মিশর আক্রমণ করেন এবং সেখানে টলেমি বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এই বংশের দ্বাদশ টলেমির কন্যা ছিলেন ক্লিওপেট্রা। মাত্র ১৮ বছর বয়সে পিতার সঙ্গে সহ শাসক হিসাবে মিশরের শাসন পরিচালনায় হাত দেন ।
ক্লিওপেট্রার সিংহাসন লাভ :
তৎকালীন প্রচলিত রীতি অনুযায়ী একাকী কোন শাসক শাসন কাজ পরিচালনা করতে পারতেন না। তাই পিতার মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই ত্রয়োদশ টলেমির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং মিশরের সিংহাসনে নিজ দখলে রাখেন।
ক্লিওপেট্রা ও রোমান আক্রমণ :
সিংহাসন লাভের কয়েক বছরের মধ্যে খ্রীষ্টপূর্বা ৪৭ অব্দে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার মিশর আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে স্বামী তথা ভাই ত্রয়োদশ টলেমি মারা গেলে মিশরের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এক অভিনব উপায় অবলম্বন করেন।
পরাজিত ক্লিওপেট্রা নিজের সৌন্দর্য ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রাচ্যদেশীয় কার্পেটে মুড়িয়ে জুলিয়াস সিজারের স্বয়ং উপঢৌকন হিসাবে উপস্থিত হন। সিজার তাঁর অপরূপ সৌন্দর্য ও বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে মিশরের শাসন কর্তা নিযুক্ত করেন।
এভাবে তিনি রোমে থেকেই মিশরের শাসন পরিচালনা করতে থাকেন। এবং সিজারের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মতই বসবাস করেন।
ক্লিওপেট্রার মিশর আগমন :
খ্রিস্টপূর্ব ৪৪ সালে এক আততায়ীর হতে জুলিয়াস সিজার মারা যান। ফলে তিনি রোম থেকে মিশরে চলে আসেন এবং আর এক ভাই চতুর্দশ টলেমিকে বিবাহ করে মিশরের সিংহাসনে নিজের আধিপত্য ধরে রাখেন।
পঞ্চদশ টলেমির সঙ্গে যৌথ শাসন :
পঞ্চদশ টলেমি ছিলেন জুলিয়াস সিজারের ঔরসজাত ক্লিওপেট্রার নিজের সন্তান। সিংহাসনে নিজের অধিপত্যকে নিরঙ্কুশ করার জন্য নিজ ভাই তথা স্বামী চতুর্দশ টলেমিকে হত্যা করেন এবং সন্তান পঞ্চদশ টলেমির সঙ্গে যৌথ শাসন শুরু করেন।
অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রা :
জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যে তাঁরই বন্ধু ও রোমান সেনাপতি মার্ক অ্যান্টনি মিশর অভিযান করেন। মিশরের স্বাধীনতা রক্ষায় এবারও তিনি তাঁর সৌন্দর্য ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগান। অ্যান্টনিকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। ক্লিওপেট্রার প্রতি প্রেম ও মিশরের সিংহাসন লাভের সহজ সুযোগ কাজে লাগতে অ্যান্টনি খ্রিস্টপূর্ব ৩৬ অব্দে ক্লিওপেট্রাকে বিবাহ করেন।
অক্টাভিয়াসের মিশর আক্রমণ ও ক্লিওপেট্রার পতন :
অ্যান্টনী ছিলেন রোমান সম্রাট অক্টাভিয়াসের একাধারে তাঁর সেনাপতি ও ভগ্নিপতি । ফলে, অ্যান্টনি ও ক্লিওপেট্রার বিবাহের খবর পেয়ে রোমান শাসক অক্টাভিয়াস ক্রুদ্ধ হন এবং মিশর আক্রমণ করেন। শুরু হয় অ্যাকটিয়ামের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে অ্যান্টনী ও ক্লিওপেট্রার বাহিনী চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন এবং মিশরের পতন ঘটে।
ক্লিওপেট্রার চারিত্রিক ত্রুটি :
ক্লিওপেট্রার চরিত্রে ছিল একাধারে প্রচন্ড উচ্চাকাঙক্ষা এবং মাতৃভূমির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। এই দুইয়ের টানে তিনি জীবনে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা তাঁকে কঠোর সমালোচনার মুখে ঠেলে দিয়েছে। নিজের ভাই সহ একাধিক পুরুষের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িয়ে 'পাগল' (রোমান কবি হোরাস) ও 'মিশরের লজ্জা' (লুকান) বলা চিহ্নিত হয়েছেন।
ক্লিওপেট্রার কৃতিত্ব :
এই সমস্ত ত্রুটি সত্বেও শাসক হিসাবে তিনি কৃতিত্বের দাবি করতে পারেন।
- নারীর ক্ষমতায়ন : প্রাচীন যুগের নারী হিসাবে তিনি যেভাবে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে নারীর ক্ষমতায়নকে নিশ্চিত করেছিলেন এবং কূটনৈতিক সাফল্য দেখিয়েছেন তা নজিরবিহীন।
- অসীম সাহস ও বীরত্ব : যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি অসীম সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
- তাঁর দেশ প্রেম ছিল অকৃত্রিম ও ঈর্ষণীয়। দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় তিনি যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতেন না।
এই সমস্ত কারণে খ্রিস্টপূর্ব যুগের নারী হয়েও তিনি বর্তমান যুগে সমানভাবে আলোচিত হন ও স্মরিণীয় হয়ে আছেন।
------- শেষ -------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন