জনপদ ও মহাজনপদের মধ্যে পার্থক্য
Differences between Janapada and Mahajanapada
জনপদ ও মহাজনপদগুলোর উৎপত্তি ও বিকাশ বিশ্লেষণ করলে এদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এগুলো হল -
১) সময়কাল :
প্রাচীন আর্য উপজাতিদের বাসভুমিকে জন বলা হয়। এগুলোই খ্রিষ্টপুর্ব ১০০০-৬০০ অব্দের মধ্যে জনপদে পরিণত হয়।
কিন্তু মহাজনপদগুলো গড়ে ওঠে খ্রিস্টপুর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর (৬০০) পরবর্তীকালে।
২) উদ্ভবের কারণ :
লোহার ব্যবহার ও কৃষির বিকাশের সাথে সাথে জনপদগুলোর বিকাশ ঘটে।
কিন্তু জনপদগুলোর মধ্যে ধারাবাহিক সংঘর্ষ ও একাধিক জনপদের পারস্পরিক সংযুক্তির মাধ্যে দিয়ে মহাজনপদের উদ্ভব হয়।
৩) আয়তন ও জনসংখ্যা :
জনপদগুলোর আয়তন ছিল ক্ষুদ্রাকার ও জনসংখ্যা ছিল খুবই অল্প। গ্রিসের নগররাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
অন্যদিকে, মহাজনপদগুলোর আকৃতি অপেক্ষাকৃত বৃহৎ এবং জনসংখ্যাও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
৪) সম্পদ :
জনপদের প্রধান সম্পদ ছিল গবাদি পশু।
অপরদিকে, মহাজনপদ সৃষ্টির পর কৃষির ব্যপক বিকাশ ঘটলে গরুর পাশাপাশি কৃষিজমি ও কৃষিপণ্য সম্পদ হিসাবে গুরুত্বপুর্ণ হয়ে ওঠে।
৫) রাজনৈতিক চেতনা :
জনপদগুলোর মানুষের রাজনৈতিক চেতনা ছিল যথেষ্ট কম। গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজজীবন ছিল জনপদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু, মহাজনপদগুলোর উৎপত্তি ও বিকাশের সাথে সাথে মানুষের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায়। ফলে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে।
৬) কর ব্যবস্থা :
জনপদের সময় কোনো সুনির্দিষ্ট কর ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। অর্থাৎ কর দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল না।
অন্যদিকে, মহাজনপদের সময় রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে।
৭) শাসকের ক্ষমতা :
ক্ষুদ্রায়তন হওয়ায় জনপদের শাসক (‘জনপদিন’)-এর ক্ষমতা ছিল সীমিত।
আর, আকারে বড় হওয়ায় এবং সুনির্দিষ্ট করব্যবস্থা থাকায় মহাজনপদের শাসকের ক্ষমতা ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি।
৮) শেষ পরিণতি :
জনপদগুলোর সংযুক্তির কারণে মহাজনপদ গড়ে ওঠে।
একইভাবে, মহাজনপদগুলোর সংযুক্তির ফলে সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে।
-----------xx----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন